অনলাইনে পশু কেনাকাটায় সরকারের জোর তৎপরতা
৮ জুলাই ২০২১ ০৯:৫১
ঢাকা: করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে এবার অনলাইনে পশু বিক্রির ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। পশু বিক্রির জন্য দেশের সব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা উপজেলার কর্মকর্তারা ফেসবুক গ্রুপ ও অ্যাপসে খামারিদের কোরবানিযোগ্য পশুর বিভিন্ন তথ্য আপলোডে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অনলাইনে পশু বিক্রির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে এরই মধ্যে ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন করা হয়েছে। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটও অনলাইনে পশু বিক্রি করছে। ফেসবুক গ্রুপ কিংবা ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকেও পশু বিক্রি চলছে। সবমিলিয়ে অনলাইনে এবার ১ লাখ পশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে এরই মধ্যে পশু বিক্রিও শুরু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার বেশ সাড়া পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, এবার অনলাইনে গবাদি পশু বিক্রির ওপর জোর দিচ্ছি। উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা পশুর ছবি ও বিস্তারিত তথ্য আপলোড করছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়েও নানা ধরনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। যেহেতু করোনার কারণে এবার সাধারণ বাজার ব্যবস্থা ঠিক রাখা কঠিন হবে, তাই অনলাইনে এবার পশুরহাটের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে কৃষকের আঙিনা থেকে যাতে ক্রেতারা পশু কেনেন সেই বিষয়েও জোর দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতাদের আমরা নানাভাবে সচেতন করার চেষ্টা করছি, যাতে তারা কৃষকের আঙিনা থেকে পশু ক্রয় করেন।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল সারাবাংলাকে বলেন, গত বছর অনলাইনে ২৭ হাজার পশু বিক্রি হয়েছিল। এবার লক্ষ্য ১ লাখ পশু বিক্রি। গতবারের তুলনায় এবার অনলাইনে পশু কেনার রিকোয়েস্ট বেশি পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু করোনা সংক্রমণ বাড়ছেই, পশুরহাটে এবার ক্রেতারা কম যাবেন, তাই অনলাইনে পশু কেনাবেচা এবার অনেক ভালো হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
গেল কয়েক বছর ধরেই কোরবানির চাহিদা মেটাচ্ছে দেশিয় পশু। চাহিদার তুলনায় কোরবানিযোগ্য গরু ছাগল এবারও উদ্বৃত্ব রয়েছে। দেশে এবার কোরবানি যোগ্য পশু রয়েছে এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার। এবার ঈদে এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে বলে ধারণা করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এদিকে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীন এবারের ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে ইক্যাব ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন। গেল ৪ জুলাই এই ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন করা হয়। জানা গেছে, ডিজিটাল এই হাটে প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে ৩৪টি গরু বিক্রি হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের অনলাইনে পশু বিক্রির বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের স্থানীয় কর্মকর্তাগণ অনলাইনে গবাদি পশু বিক্রয়ের জন্য খামারিদের সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযোগে সহযোগিতা প্রদান করবে। সংশ্লিষ্ট ভেটেরিনারি সার্জনরা অনলাইনে পশুর তথ্য আপলোড করার পূর্বে গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সনদ প্রদান করবে। যা অনলাইনে আপলোড করতে হবে। আপলোডকৃত গাবদি পশুর ক্ষেত্রে মালিকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, গবাদি পশুর বয়স, ওজন, ছবি ও মূল্য ইত্যাদি তথ্য দেওয়া থাকলে ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজাহা উপলক্ষে গবাদি পশুর অনলাইনে বিক্রি ব্যবস্থা জোরদারকরণে প্রয়োজনীয়সংখ্যক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।’ জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এখন অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে খামারিদের কোরবানিযোগ্য পশুর ছবি আপলোডে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রাণিসম্পদ দফতর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের উদ্যোগে খোলা ‘অনলাইন কোরবানির পশুর হাট, মুরাদনগর, কুমিল্লা’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ সারাবাংলার নজরে এসেছে। সেখানে প্রতিদিনই নতুন নতুন ছবি আপলোড করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় নানা তথ্য।
জানতে চাইলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. কামরুল আহমেদ খান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা অনলাইনে পশুর তথ্য আপলোড করতে শুরু করেছি। তবে অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয় সাধারণ মানুষের কাছে তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। যেহেতু করোনা সংক্রমণ কমছে না, আশা করি এবার গতবারের চেয়ে ভালো সাড়া পাবো। কারণ কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হলে হয়তো ৩ থেকে ৪ দিন সময় পাওয়া যাবে। মানুষ তখন সরাসরি হাঁট থেকে পশু কিনতে তেমন সময় পাবে না। তখন হয়তো অনেকেই অনলাইন থেকে পশু কিনবে।
মুরাদনগর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও জানান, আমরা শুধু অনলাইনে কোরবানির পশুরহাট, মুরাদনগর ফেসবুক গ্রুপ নিয়ে কাজ করছি তা নয়- আমরা কুমিল্লা অনলাইন পশুরহাট অ্যাপস নিয়েও কাজ করছি। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এটি বাস্তবায়ন করছে। অ্যাপসটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে, সেখানে কুমিল্লা জেলার সব উপজেলার পশুর তথ্য আপলোড হচ্ছে। গেল বছর এই অ্যাপসের মাধ্যমে মুরাদনগরে গোটা বিশেক পশু বিক্রি হয়েছিল।
অনলাইনে পশু বিক্রির বিভিন্ন সাইট: সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অনলাইনে পশু কেনাবেচার জন্য এরই মধ্যে চালু হয়েছে ডিজিটাল হাট ডট নেট। গেল বছর এটি প্রথমবারের মতো চালু হয়েছিল। ই-কমার্স সাইট ই-ভ্যালি গরুর হাট নামের একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছে, সেখান থেকেও কোরবানির পশু কেনা যাবে। বিক্রয় ডটকম চালু করেছে বিরাট হাট নামের ক্যাম্পেইন। দারাজও অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করছে। বেঙ্গল মিটসহ আর একাধিক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পশু বিক্রি করছে। অনলাইনে পশু বিক্রির জন্য এখন প্রস্তুত দেশের প্রায় সব ই-কমার্স সাইটগুলো।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এএম