Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা নিয়ন্ত্রণে ৫টি সমন্বিত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের দাবি বিএনপির

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ জুলাই ২০২১ ১৪:৩৪

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে পাঁচটি সমন্বিত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) দুপুরে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সমন্বিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. দরিদ্র মানুষকে ঘরে রাখার জন্য তাদের ঘরে এককালীন কমপক্ষে ১৫ হাজার নগদ টাকা এবং খাদ্য পৌঁছে দিতে হবে, ২. বাইরে বের হওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, ৩. অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে দ্রুত ভ্যাকসিন দিতে হবে। এ জন্য একটি সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট রোড-ম্যাপ প্রণয়ন করে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। অবিলম্বে দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ৪. বর্তমানে সারাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সর্বাত্মক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সারাদেশে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ ও করোনাবেড বৃদ্ধিসহ অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসাসামগ্রী ও পর্যাপ্ত চিকিৎসক/স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে এবং ৫. অনেক বিলম্ব হলেও এখনি দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সকল রাজনৈতিক দল, এনজিও ও সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে একটি জাতীয় আপদকালীন পরামর্শক কমিটি গঠন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই পাঁচটি জিনিস করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রধান টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে যে লড়াই সেটা বস্তুত একটি দীর্ঘস্থায়ী লড়াই।’

তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে চলমান লকডাউনকালে দরিদ্র, দুঃস্থ ও কর্মহীন জনগোষ্ঠী অর্থাৎ দিন আনে দিন খায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, হকার, প্রান্তিক কৃষক এবং যেসব নিম্নবিত্ত ইতোমধ্যে দরিদ্রের কাতারে নেমে পড়েছে তাদের চিহ্নিত করে ঘরে রাখার প্রয়োজনে প্রত্যেককে অবিলম্বে এককালীন নগদ ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিডিপি’র ৬-৭ শতাংশ অর্থাৎ বর্তমান ৬ লাখ কোটি টাকার বিরাট বাজেটের একটি সামান্য অংশ এ খাতে বরাদ্দ করলেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব। যা দরকার সেটা হলো সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা।’

করোনার ‘লকডাউনে’ অভাবের তাড়নায় মুন্সিগঞ্জের দিনমজুর দ্বীন ইসলামের আত্মহত্যা, দিন আনে দিন খায় শ্রেণির মানুষের দুর্ভোগ, তাদের জীবন-জীবিকার কষ্টের নানা ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘করোনা মহামারি একটা সর্বাত্মক যুদ্ধ। ভোট ডাকাত সরকার করোনা যুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তো নেয়নি বরং তারা ব্যক্তিগত আচার-আচরণ, হিংসা ছড়ানো ও বাগাড়ম্বরের মাধ্যমে জাতিকে ভয়াবহ বিভক্তির দিকে ঠেলে দিয়ে করোনা যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের পরিবেশ বিনষ্ট করেছে।’

‘সম্প্রতি সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যাচার যুদ্ধকালীন সময়ে একজন অদক্ষ সেনাপতির আচরণের সমতুল্য। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা প্রথম থেকেই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একসঙ্গে সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে এই বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছিলাম এবং বিকল্প প্রণোদনা ও বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

‘করোনা ক্ষমতাসীনদের জন্য আশীর্বাদ’— এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জনপ্রতি আড়াই হাজার টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি আর হতদরিদ্রের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ-সামগ্রী চুরির কাহিনী দেখে মনে হয় করোনা সরকার দলীয় লোকজনের জন্য যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের এক অবস্থানপত্রে ধরা পড়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রদেয় ৫০ লাখের তালিকায় ১৪ লাখ ৩৩ হাজার লোকের নামই ভুয়া। আজকের পত্রিকায় একটা খবর এসেছে- ঝিনাইদহে দুই কোটিপতিকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। একজনের নাম খোকন সরকার আরেক নাম হচ্ছে রাজু দাস। তারা কোটিপতি। একজনের জুয়েলারি আছে, আরেকজনের কোম্পানি আছে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এখন ভ্যাকসিন দেওয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে। সারা পৃথিবীতে প্রমাণ হয়েছে- যেসব দেশ ৭০/৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকিসিন দিতে পেরেছে তারাই করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। এর কোনো বিকল্প নাই।’

তিনি বলেন, ‘লাখ লাখ ভ্যাকসিনের হিসাব দেখালে হবে না। এখন কোটি কোটি ভ্যাকসিনের হিসাব দেখতে চাই। তাহলেই বাংলাদেশকে করোনার এই ভয়াল গ্রাস থেকে আমরা পরিত্রাণ করতে পারব, নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সেই লক্ষ্যে আমি আবার সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, এই ব্যাপারে রাখ-ঢাক না করে দ্রুত কোটি কোটি ভ্যাকসিন আমদানি করার ব্যবস্থা করুন। দেশের জনগণকে রক্ষার ব্যবস্থা করুন, এদেশের মানুষের জীবন-জীবিকাকে রক্ষা করুন। তা নাহলে আপনারা এদেশের ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।’

বিএনপির জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ কমিটির আহবায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক বলেন, ‘গত বছর দুই কোটি মানুষের কাছে আমরা সাহায্য পৌঁছিয়ে দিতে পেরেছিলাম। এবার এই দ্বিতীয় টেউয়ের আমরা আগের মতোই ব্যবস্থা নিয়েছি। এবার প্রতিটি জেলায় আমাদের দলের অফিসে হেলথ সেন্টার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্বাস্থ্য সামগ্রী থাকবে। অলরেডি এই কাজ বেশ কয়েকটি জেলায় শুরু হয়ে গেছে। আগামী দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি জেলার অফিসে এই হেলথ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’

‘যেহেতু লকডাউন। কোথাও গেলে আমরা প্রশাসনের থেকে বাধাপ্রাপ্ত হই। সেজন্য আমরা যে যা পারি সীমিত সামর্থের মধ্যে মানুষজনকে সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছি। একটা বিরোধীদল হিসেবে এত কষ্টের মধ্যেও আমরা করোনা রোগীদের পাশে আছি ও কাজ করে যাচ্ছি’— বলেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

ভার্চুয়াল এ সংবাদ সম্মেলনে নিজ নিজ বাসা থেকে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ ‍টুকু ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

করোনা টপ নিউজ বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর