আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী পুনরুদ্ধার করেছে সরকারি বাহিনী
৮ জুলাই ২০২১ ১৬:১৫
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় বাদঘিস প্রদেশের রাজধানী ক্বালা-ই-নাও পুনরুদ্ধার করেছে সরকারি বাহিনী। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) উগ্রবাদী গোষ্ঠী তালেবানকে হঠিয়ে শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনারা।
এর আগে বুধবার সকালে প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিতে তিন দিক থেকে হামলা চালায় তালেবান। তাৎক্ষনিক ওই হামলার প্রথম পর্বে শহরের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয় উগ্রবাদী সংগঠনটি। মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর এই প্রথম কোনো প্রদেশের রাজধানীতে হামলা চালায় তালেবান।
বুধবারের হামলায় ক্বালা-ই-নাও শহরের পুলিশ সদরদফতর ও গোয়েন্দা কার্যালয় দখল করে নেয় তালেবান। এছাড়া শহরের কারাগারের দখল নিয়ে প্রায় ৪০০ বন্দীকে মুক্ত করে দেয় তারা। তালেবানের হামলায় প্রাদেশিক কাউন্সিল কর্মকর্তাদের শহরের একটি সামরিক ঘাঁটিতে স্থানান্তর করে শহর কর্তৃপক্ষ।
পরে আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর সদস্যরা তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। ওই শহরের পতন ঠেকাতে অতিরিক্ত সেনা পাঠায় কাবুল।
বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফাওয়াদ আমান বলেন, ‘শহরটি আমরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি’। তবে শহরের উপকণ্ঠে এখনও তালেবানের বিরুদ্ধে কিছু লড়াই চলছে বলেও জানান তিনি। ফাওয়াদ আমান বলেন, ‘শহরের উপকণ্ঠে তালেবানদের বিরুদ্ধে আমরা কিছু অভিযান পরিচালনা করছি’।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে, প্রাদেশিক রাজধানী পুনরুদ্ধার অভিযানে সরকারি বাহিনীর হাতে তালেবানের ৬৯ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের টুইটারে বলা হয়েছে, তালেবানের বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে সরকারি বাহিনী।
চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট। গত বছর সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকে আফগানিস্তানে উগ্রবাদী গোষ্ঠী তালেবানের সহিংসতা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই আফগানিস্তানের কোনো না কোনো অঞ্চল দখল করে নিতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার বাদঘিস প্রদেশের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেলেও প্রদেশটির বেশিরভাগ জেলা এখনও তালেবানের দখলে। কর্মকর্তারা বলছেন, আফগানিস্তানের প্রায় ১০০টি জেলার দখল নিয়েছে তালেবান। তবে তালেবান দাবি করছে, তাদের দখলে রয়েছে ২০০টিরও বেশি জেলা। যদিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, তালেবানের দখলকৃত অনেক জেলা পুনরুদ্ধার করেছে সরকারি বাহিনী।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানিয়েছেন, উগ্রবাদী গোষ্ঠী তালেবানের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তার সরকারের নেই। তালেবান যদি মনে করে আমরা আত্মসমর্পণ করব, তাহলে তাদের এই আশা আগামী ১০০ বছরেও পূরণ হবে না।
বুধবার প্রতিবেশী দেশ ইরানের রাজধানী তেহরানে আফগানিস্তান কর্তৃপক্ষ ও তালেবানের প্রতিনিধিদের এক বৈঠক হয়। এতে ইরান মধ্যস্থতা করে। এর আগে কাতারের মধ্যস্থতায়ও এমন বৈঠক হয়েছিল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখবেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। উল্লেখ্য, বুধবার পেন্টাগন জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৯০ ভাগ সৈন্য আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
- বাগরাম ঘাঁটি ছাড়ল মার্কিন-ন্যাটো সেনারা
- আফগানিস্তান নিজের ভবিষ্যত ঠিক করবে: বাইডেন
- তালেবান ঠেকাতে অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে সাধারণ আফগানরা
- তালিবানের অন্ধকার যাত্রার প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে আফগান নারী
- তালেবানের হামলায় তাজিকিস্তানে পালিয়েছেন ১ হাজার আফগান সেনা
- আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানীতে তালেবানের হামলা, লড়াই চলছে
- রাতে না জানিয়েই বাগরাম ছেড়েছে আমেরিকা— অভিযোগ আফগানিস্তানের
সারাবাংলা/আইই