Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম: কঠোর অবস্থানে সরকার, আতঙ্কে মাঠ প্রশাসন

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ জুলাই ২০২১ ২২:৫৯

ঢাকা: দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না— জাতির জনকের এই স্বপ্ন পূরণ করতেই বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ভূমিহীন, গৃহহীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। এরই মধ্যে দেশের প্রায় সোয়া এক লাখ পরিবারের মধ্যে সেই ঘর হস্তান্তরও করা হয়েছে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ইট-সুরকি দিয়ে নির্মাণ করা এসব ঘরের বেশকিছু ভেঙে পড়েছে। কোনো কোনোটিতে দেখা দিয়েছে বিশাল ফাঁটল। আবার কিছু ঘর মাটিতে দেবে গেছে।

বিজ্ঞাপন

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এসব ঘর ভেঙে পড়ার খবর আসতে থাকায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। এসব ঘর নির্মাণের তদারকিতে থাকা মাঠ প্রশাসনের গাফিলতিতেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর এই পরিণতি— এমনটিই বলা হচ্ছে। সম্প্রতি এই প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে পাঁচ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এই প্রকল্পে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার।

বিজ্ঞাপন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষে দেশের পৌনে ৯ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার সরাসরি প্রকল্প না নিয়ে তিনটি কর্মসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এ উদ্যোগ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ‘দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি প্রকল্প’, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প’ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’— এই তিন প্রকল্পের অধীনে নির্মাণ করা হচ্ছিল ঘরগুলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারের জন্য সেমি-পাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে দুইটি শোবার ঘর, একটি রান্নাঘর, একটি ইউটিলিটি রুম, একটি বারান্দা ও একটি টয়লেট রয়েছে। ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে ও রঙিন টিনের ছাউনিওয়ালা ঘরগুলোর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন- আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে ৫ কর্মকর্তা ওএসডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে অগ্রাধিকারমূলক এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও)। তাদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন উপজেলা প্রকৌশলী, এসি ল্যান্ড, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরা। তাদের পর্যবেক্ষণে প্রতিটি ঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বর্ষা আসতেই অনেক ঘর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে। কারও বিরুদ্ধে তালিকা অনুযায়ী ঘর না দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সামাজিক গণমাধ্যমে সেসব ঘরের ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক এই প্রকল্পে এরই মধ্যে চরম অনিয়মের অভিযোগে মাঠ প্রশাসনের পাঁচ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। এর মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত উপসচিব মো. শফিকুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের সাবেক ইউএনও) বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। ওএসডি করা বাকি চার জন হলেন— বরগুনার আমতলীর ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. লিয়াকত আলী শেখ (বগুড়ার শেরপুরের সাবেক ইউএনও), হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুবায়েত হায়াত (মুন্সীগঞ্জ সদরের সাবেক ইউএনও) ও মুন্সীগঞ্জ সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেসবাহ উল সাবেরিন। এর বাইরেও তদন্ত চলছে আরও অনেকের বিরুদ্ধে।

ওই পাঁচ কর্মকর্তাকে ওএসডি করার পর সারাদেশের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউএনও নিজেদের নিদোর্ষ দাবি করেও জানিয়েছেন, তারা আতঙ্কিত। তাদের বক্তব্য, এই তদারকির সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি জড়িত। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে সেটি তো ইউএনও একা করেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরই দোষী করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সারাবাংলাকে জানান, এখনই কোনো মন্তব্য করতে চান না তিনি।

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে দেশের ৪০ উপজেলায় তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৩০টি উপজেলায় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা শুরু হবে।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

আশ্রয়ণ প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প ঘর নির্মাণে অনিয়ম মুজিববর্ষে ঘর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর