Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিঙ্গাপুর-কলম্বো বন্দরে জট, সংকটে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ জুলাই ২০২১ ২৩:১৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে সিঙ্গাপুর-কলম্বোসহ বিভিন্ন বন্দরে জাহাজ ও কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। এর ফলে সংকট তৈরি হয়েছে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। লোকসানের মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম বন্দর ও দেশের বেসরকারি অফডকগুলোতে রফতানি কনটেইনার জমে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় দেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হিসেবে সিঙ্গাপুর ও কলম্বোর বিকল্প বন্দর খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনের কনটেইনার ও জাহাজের কোনো সংকট নেই। বরং বন্দর ও বেসরকারি ডিপোগুলোতে ৪০ হাজারের বেশি খালি কনটেইনার আছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হিসেবে ব্যবহার হয় সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর। এছাড়া মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হয়েও কিছু পণ্য পরিবহন হয়। সম্প্রতি পণ্য পরিবহন বেড়ে গেলে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে জাহাজ জট দেখা দেয়। তখন জট কমাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের চার্জ আরোপ করে। এতে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েন।

সাম্প্রতিক সময়ে সিঙ্গাপুর কলম্বোতে জাহাজ জট তৈরি হলে আন্তর্জাতিক দুটি শিপিং কোম্পানি রফতানি পণ্যের বুকিং বন্ধ করে দেয়। এতে দেশের ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে প্রায় ১৪ হাজার রফতানি পণ্যের কনটেইনার জমে যায়। অন্যদিকে আমদানি পণ্যের প্রায় ৩০ হাজার কনটেইনার জমে যায় সিঙ্গাপুর-কলম্বোতে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘কনটেইনার ও জাহাজ জট নিয়ে যে পরিস্থিতি বা সংকট তৈরি হয়েছে, এটি চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো সংকট নয়। এটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টগুলোর সংকট। মেইন লাইন অপারেটর বা এমএলও যারা আছেন তাদের কনটেইনার পরিবহনের সংকট। তবে এই সংকটের সহজ সমাধানও আছে। এমএলওদের মধ্যে ডাইরেক্ট ইন্টারচেঞ্জ চুক্তি থাকলে অর্থাৎ একজনের কনটেইনার আরেকজন পরিবহনের সুযোগ থাকলে সংকটের সুরাহা হয়। কমন ক্যারিয়ার অ্যাগ্রিমেন্টও যদি তাদের মধ্যে থাকত, তাহলে এই সংকট হতো না। এই সংকটের সমাধান চট্টগ্রাম বন্দর কিংবা মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই।’

এদিকে, সংকট উত্তরণে বুধবার (৭ জুলাই) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান, বিজিএমইএ সভাপতি, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম চেম্বারের সহসভাপতি, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন, বেসরকারি ডিপো মালিক ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের প্রতিনিধরা অংশ নেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সভায় চট্টগ্রাম চেম্বারের সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর সিঙ্গাপুর-কলম্বোর বিকল্প বন্দরের চিন্তার পাশাপাশি একটি শিপিং লাইনের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে চীন থেকে সরাসরি আসা জাহাজকে চট্টগ্রাম বন্দরে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।

তানভীর জানান, বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ রফতানি পণ্য মার্কস লাইন পরিবহন করে। সিঙ্গাপুর-কলম্বোতে জটের কারণে তারা এখন বুকিং নিচ্ছে না। তাই একাধিক শিপিং লাইনে পণ্য পরিবহনের সুযোগ থাকা উচিত। চীনের সাংহাই, গোয়াংঝুসহ একাধিক বন্দর ব্যবহার করে সরাসরি পণ্য পরিবহন করলে সময় এবং অর্থের সাশ্রয় হবে। যেসব এমএলও চীন থেকে সরাসরি জাহাজ পরিচালনা করবে সেই জাহাজগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে অধিকাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয়। পণ্য আসে সিঙ্গাপুর হয়ে। অথচ সরাসরি এলে দুই সপ্তাহের মধ্যে পণ্য পৌঁছবে চট্টগ্রাম বন্দরে, যা সিঙ্গাপুর থেকে আসতে মাস পার হয়ে যায়। আবার ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি হয়। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রফতানি হয় দেশগুলোতে। আমদানি পণ্য মাদার ভেসেল বা বড় জাহাজে করে সিঙ্গাপুর বন্দরে আসে। সেখান থেকে ফিডার ভেসেলে বাংলাদেশের বন্দরে আসে। রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে কারখানা থেকে পণ্য পাঠানো হয় বেসরকারি ডিপোতে। সেখান থেকে কনটেইনারে করে সরাসরি ফিডার জাহাজে তোলা হয়। সেটি সিঙ্গাপুর বা কলম্বো বন্দরে নিয়ে যায়। সেখান মাদার ভেসেলে করে গন্তেব্যে পৌঁছে।

সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বর্তমানে জাহাজ ও কনটেইনার সংকট নেই। আন্তর্জাতিকভাবে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এমএলওরা বুকিং নিচ্ছে না। তাই কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি খালি কনটেইনার আছে। অফডকে ২০ ফুটের ১৩ হাজার ৬৪৭ ও ৪০ ফুটের ১২ হাজার ৬৮৯ এবং বন্দরে রয়েছে ২০ ফুটের ২ হাজার ৪৩১ ও এক হাজার ৪৭৭টি ৪০ ফুটের কন্টেইনার।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কারণে সিঙ্গাপুর, কলম্বোসহ বিভিন্ন বন্দরে জাহাজ ও কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। করোনাকালীন গত একবছরে বিভিন্ন দেশে লকডাউনে শ্রমিক সংকট, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব বন্দরেই পণ্য পরিবহনে সংকট তৈরি হয়েছে। বন্দরগুলোর জেটিতে জাহাজ ভিড়তে ৮ থেকে ১০ দিন লেগে যাচ্ছে।

এতে বাংলাদেশ, ভারত, কম্বোডিয়ার মতো ছোট বন্দর থেকেও ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরের মাধ্যমে বড় জাহাজে রফতানি পণ্য তুলতে বিলম্ব হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে পৌঁছার পর মাদার ভেসেলে কানেকশন পেতে প্রায় দুই সপ্তাহ লাগছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সিঙ্গাপুর-কলম্বো বন্দর থেকে বাংলাদেশের রফতানি কনটেইনার দ্রুত পরবর্তী গন্তব্যে পরিবহনের জন্য দুই দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের হাইকমিশনারদের তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

চট্টগ্রাম বন্দর টপ নিউজ রফতানি বাণিজ্য


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে হামলার হুমকি!
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫

সম্পর্কিত খবর