Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিচের সিঁড়িতে আগুন, ছাদের সিঁড়ি তালাবন্ধ— পুড়ে কয়লা ৪৯ শ্রমিক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ জুলাই ২০২১ ১৫:৪৩

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড ও সজীব গ্রুপের খাদ্যপণ্য উৎপাদনের কারখানায় আগুন কেড়ে নিয়েছে অর্ধ শতাধিক প্রাণ। এর মধ্যে কারখানার চতুর্থ তলা থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে ৪৯টি মরদেহ। ফায়ার সার্ভিস বলছে, চতুর্থ তলাটি ছিল তালাবন্ধ। যে কারণে সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। আগুনে কেড়ে নিয়েছে তাদের প্রাণ।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার পর আগুন লাগে রূপগঞ্জের ওই কারখানায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে শুক্রবার সকাল থেকেই কারখানাটিতে তল্লাশি চালাতে থাকে ফায়ার সার্ভিস। আর এসময় চতুর্থ তলা থেকে ৪৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার বিকেল ৩টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কারখানার পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় উদ্ধার অভিযান চলছে। সেখান থেকে আরও মরদেহ উদ্ধারের আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন-

ঘটনাস্থলে কর্মরত ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছয় তলা কারখানাটির ছাদে ওঠার জন্য দুইটি সিঁড়ি রয়েছে। চতুর্থ তলা থেকে ছাদে যাওয়ার যে সিঁড়িটি, সেটি ছিল তালাবন্ধ ছিল। চতুর্থ তলা থেকে নামার সিঁড়ি খোলা থাকলেও নিচের ভয়াবহ আগুনের কারণে সেই সিঁড়ি দিয়ে নামার কোনো সুযোগ ছিল না। ওই সিঁড়ি দিয়ে নামার অর্থ আগুনে ঝাঁপ দেওয়া।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, এ অবস্থায় শ্রমিকরা নিচে নামতে পারেননি। অন্যদিকে ওপরে ওঠার সিঁড়ি তালাবন্ধ থাকায় শ্রমিকরা ছাদেও যেতে পারেননি। আগুনের লেলিহান শিখার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে তাদের। ছাদে ওঠার সিঁড়িটা খোলা থাকলে হয়তো তারা ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারতেন। সেক্ষেত্রে ছাদ থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়তো সম্ভব হতো।

বিজ্ঞাপন

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশিষ বর্ধন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গাড়িতে মই লাগিয়ে কিন্তু ছাদ থেকে ২৫ জনকে উদ্ধার করেছি। অন্য শ্রমিকরাও ছাদে ওঠার সুযোগ পেলে আমরা তাদের ছাদ থেকে নামিয়ে আনতে পারতাম। কিন্তু চতুর্থ তলার শ্রমিকেরা সেই সুযোগটিই পাননি।

একই তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসেনও। শুক্রবার দুপুরে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, কারখানার চতুর্থ তলা থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কারখানাটির চতুর্থ তলাটি তালাবন্ধ ছিল। ফলে আগুন লাগার পর সেখান থেকে কেউ বের হতে পারেনি। সে কারণেই এতগুলো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।

কারখানা থেকে উদ্ধার করা ৪৯টি মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য এরই মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পৌঁছেছে। শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রূপগঞ্জের ওই কারখানায় এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে। কারখানার পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় এখন তল্লাশি চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে রূপগঞ্জের হাসেম ফুডসের কারখানাটিতে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ডেমরা, কাঞ্চন, সিদ্ধিরগঞ্জ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৮টি ইউনিট কাজ করে। তা সত্ত্বেও সারারাতেও সে আগুন নেভানো যায়নি। শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়নি ফায়ার সার্ভিস। এদিন সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছি।

এদিকে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর শুরু হয় তল্লাশি। আর সে সময়ই কারখানার চতুর্থ তলা থেকে ৪৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই কারখানার আগুনে অগিদগ্ধ হয়ে স্বপ্না রাণী (৪৫) ও মিনা আক্তার (৩৩) নামে দুই শ্রমিক মারা যান। রাতে মোরসালিন (২৮) নামে আরও এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

কারখানাটিতে আগুন লাগার পর অগ্নিদগ্ধ ও আহত হন অন্তত ২৫ জন। তাদের মধ্যে ছয় জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৫ জনকে ভর্তি করা হয় রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ছবি: হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

অগ্নিদগ্ধ তালাবদ্ধ ৪র্থ তলা হাসেম ফুডস হাসেম ফুডস কারখানায় আগুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর