ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনে নিহতদের পরিচয় শনাক্তের জন্য স্বজনদর কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথম নমুনা দেন মো. জাহের। তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৪০) গতকাল আগুন লাগার পর থেকে নিখোঁজ। ঘটনাস্থলে না পেয়ে তিনি মর্গে যান।
ক্রাইমসিন এর ডিএনএ বিশেষজ্ঞ মো. আশরাফুল আলম জানান, নারায়নগঞ্জে আগুনের ঘটনায় যে মৃতদেহ গুলো এসেছে তাদের এবং স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া শুরু হয়েছে। নমুনা নেওয়া হচ্ছে স্ত্রী, স্বামী বাবা-মা ও সন্তানদের।
তিনি জানান, মৃতদেহ থেকে হাড়, দাঁত, আর যদি চুল থাকে সেই নমুনা নেওয়া হবে। স্বজনদের রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিশু হলে মুখ থেকে লালা সংগ্রহ করা হবে।
জাহের জানান, ওই কারখানায় তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম তিন মাস ধরে কাজ করতেন। গতকাল সকালে কাজে যান। আগুন লাগার পর তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ঢাকা মেডিকেলে এসে ডিএনএর জন্য নমুনা দিলাম।
এ ছাড়া স্ত্রী জাহানারা খাতুন (৩৫) এর জন্য ডিএনএ নমুনা দিলেন স্বামী খোকন মিয়া। তার স্ত্রীও গতকাল থেকে নিখোঁজ।
উল্লেখ্য, রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুডস লিমিটেডের মালিক সজীব গ্রুপ। ফুডস ও বেভারেজ জগতে এই গ্রুপের পণ্যের প্রসার রয়েছে। এদের ৯টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তৃতীয় প্রতিষ্ঠান হলো হাসেম ফুডস লিমিটেড।
আরও পড়ুন
রূপগঞ্জে কারখানায় আগুনে হতাহতের ঘটনায় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর শোক
কারখানায় আগুন: ডিএনএ টেস্টের পর মরদেহ হস্তান্তর
কারখানায় আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজন মারা যান বৃহস্পতিবার বাকিদের মরদেহ ওই কারখানার চতুর্থ তলা থেকে শুক্রবার (৯ জুলাই) উদ্ধার করা হয়। ওই তলায় তালা লাগানো থাকায় আটকেপড়া মানুষরা বের হতে পারেননি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে রূপগঞ্জের হাসেম ফুডসের কারখানাটিতে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ডেমরা, কাঞ্চন, সিদ্ধিরগঞ্জ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৮টি ইউনিট কাজ করে। তা সত্ত্বেও সারারাতে আগুন নেভানো যায়নি। শুক্রবার দিনের বেলা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরপরই কারখানার ভেতরে উদ্ধার তৎপরতা চলে।
আরও পড়ুন-
- হাসেম ফুডস কারখানার তালাবদ্ধ ৪র্থ তলায় ৪৯ মরদেহ
- রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস ফ্যাক্টরিতে আগুন, ২ শ্রমিকের মৃত্যু
- ১৬ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি হাসেম ফুডস কারখানার আগুন
- রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস কারখানায় আগুন, আরও এক শ্রমিকের মৃত্য
হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানায় আগুনের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
লাশের পরিচয় শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সময় দাফন-কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আর আহতদের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে বলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তাদের ডিএনএ টেস্ট করার পর মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।