‘জীবিত তো আর পাবো না, লাশটা যেন দ্রুত মেলে’
৯ জুলাই ২০২১ ২৩:১০
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনে নিহতদের পরিচয় শনাক্তের জন্য মর্গে এসেছেন স্বজনেরা। তাদের অনেকেই বলছেন, ‘জীবিত তো আর ফিরে পাবো না, অন্তত পক্ষে নিহতের লাশটা যেন দ্রুত মেলে।’
শুক্রবার (৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। কারখানায় আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মেয়ে শান্তনার (১৩) খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে এসেছেন শিমু আক্তার। মৃতদেহ শনাক্ত না করতে পারায় ডিএনএ নমুনা দেন তিনি।
শিমু বলেন, ‘আমার মেয়ে শান্তনা তিনদিন হলো কাজে যোগ দিয়েছিল। সপ্তাহ পার না হতেই লাশ হতে হলো। শান্তনার বাবা জাকির হোসেন গত আট বছর আগে মারা গেছে। চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে ভুলতা গাউছিয়া নতুনবাজার এলাকায় থাকেন। তিনিও একটি গার্মেন্টে কাজ করেন। সংসারে সচ্ছলতার জন্য ছোট্ট মেয়েকে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকায় চাকরি নিয়ে দেন। শান্তনা তিনতলায় কাজ করতো।’
ঘটনাস্থলে মা মিনা খাতুনকে (৩৮) খুঁজে না পেয়ে ঢামেক মর্গে আসে চম্পা খাতুন। কিন্তু পোড়া লাশের মধ্যে মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই মায়ের লাশ পেতে ডিএনএ নমুনা দিল সেও।
এরকম আরও অনেকে দিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল মর্গে চলছে নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে দগ্ধ নিহত ও দগ্ধদের ডিএনএ নমুনা। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয় নমুনা নেওয়ার কার্যক্রম।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) রাতে এ বিষয়ে কথা বলেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় যারা মারা গিয়েছে তাদের হস্তান্তর করবে পুলিশ। আমাদের কাজ হলো মৃতদেহ স্বজনদের সঙ্গে শনাক্ত করার বিষয়টি। আমরা অলরেডি কাজ শুরু করেছি। মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছ। এদিকে দাবিদার স্বজনদের কাছ থেকেও নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে।’
মরদেহের পরিচয় পেতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ
মৃতদেহের সাথে স্বজনদের ডিএনএ মিলাতে কতদিন লাগতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে রুমানা আক্তার বলেন, ‘সাধারণত এটা নির্ভর করে নমুনার উপর। দগ্ধ মৃতদেহ থেকে দাঁত আর হাড় সংগ্রহ করি। আর স্বজনদের থেকে রক্ত। সব মিলিয়ে ২০ থেকে ৩০ দিন সময় লাগতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো দ্রুত দিতে। অনেক স্বজনই এখন পর্যন্ত আসে নাই। দাবিদার যারা আসছেন তাদের যেন ব্লাড কালেকশন হয়। যেমন বাবা-মা ভাই-বোন ও ছেলে মেয়ে। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ১৯ জনের মৃতদেহের জন্য ২৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃতদেহের থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে আবারও শুরু হবে আমাদের কার্যক্রম।’
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের সুরতহাল করেছি। আমরা ৪৮টা ব্যাগে মৃতদেহ পেয়েছি। একটি ব্যাগে দুইটা খণ্ড থাকলেও সুরতহাল ৪৮ মৃতদেহের করা হয়েছে। যদি ডিএনএ টেস্টে আলাদা ডেডবডি হয় পরবর্তীতে আলাদা সুরতহাল করা হবে।’
মর্গ সূত্রে জানা যায়, যতগুলো মৃতদেহ আসছে ময়নাতদন্ত চলছে। একইসঙ্গে চলছে নমুনা সংগ্রহ। সেগুলো মর্চুয়ারিতে রাখার সুযোগ নাই। পাঁচটি মর্চুয়ারি থাকলেও চারটি মর্চুয়ারি সচল রয়েছে। সেখানে অন্য মৃতদেহ আছে। এগুলোর মধ্যে চারটি মরদেহ রাখা যাবে। বাকিগুলো একটি কক্ষে এসি চালিয়ে রাখা হবে।’
উল্লেখ্য, রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুডস লিমিটেডের মালিক সজীব গ্রুপ। ফুডস ও বেভারেজ জগতে এই গ্রুপের পণ্যের প্রসার রয়েছে। এদের ৯টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তৃতীয় প্রতিষ্ঠান হলো হাসেম ফুডস লিমিটেড। কারখানায় আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সারাবাংলা/এসএসআর/এমও