Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনন্তলোকের সওয়ারি হলেন অরুণ দাশ গুপ্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ জুলাই ২০২১ ১৮:৩৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রাণপুরুষ, কবি ও সাংবাদিক অরুণ দাশ গুপ্ত আর নেই। শনিবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

সবসময় হাসিখুশি-প্রাণবন্ত মানুষটিকে জীবনের শেষ কিছুদিন প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় ধলঘাটে নিজ বাড়িতে কাটাতে হয়েছে। অকৃতদার অরুণ দাশ গুপ্ত শেষপর্যন্ত ৮৬ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলেই গেলেন।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘকাল দৈনিক আজাদীর সাহিত্য পাতা সম্পাদনা এবং নিরন্তর সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে তিনি চট্টগ্রামে তৈরি করেছেন বিশাল সাহিত্য অনুরাগী বলয়। মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রামের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবি ও সাংবাদিক অরুণ দাশ গুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ‘সম্মানিত সদস্য’ ছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শামসুল আরেফীন জানিয়েছেন, বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত অরুণ দাশ গুপ্ত শনিবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

অরুণ দাশগুপ্ত দীর্ঘসময় বসবাস করেছেন চট্টগ্রাম নগরীর এনায়েত বাজারে মহিলা কলেজের পাশে বাড়িতে। ‘কল্যাণী’ নামের বাড়িটি অরুণ দাশ গুপ্তের কারণেই সাহিত্য আড্ডার জন্য বিখ্যাত ছিল। কবি অভীক ওসমান জানিয়েছেন, কল্যাণীর বাসায় কয়েক দশক ধরে প্রতি বুধবার ‘বুধসন্ধ্যা’ নামে সাহিত্য আড্ডার আয়োজন হতো, যার মধ্যমণি থাকতেন অরুণ দাশ গুপ্তসহ চট্টগ্রামের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গণের বিদগ্ধজনেরা। রবীন্দ্র সাহিত্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হতো সেসব আড্ডায়। কারণ সেই বিষয়ের নিবিষ্ট চর্চা ও জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন অরুণ দাশগুপ্ত।

বিজ্ঞাপন

১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি অরুণ দাশ গুপ্তের জন্ম। জন্মস্থান ধলঘাটে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে কলকাতায় চলে যান। সেখানে স্কটিশ চার্চ কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা নেন। কর্মজীবনের শুরুতে শ্রমিক আন্দোলনে জড়িয়েছিলেন। এরপর কলকাতার লোকসেবক পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। দেশভাগের পর বাবা অবিনাশ ওয়াদ্দেদারের (দাশ গুপ্ত) সঙ্গে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে তিনি শিক্ষকতা করেছেন।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের হাত ধরে দৈনিক আজাদীর সাহিত্য পাতা সম্পাদনায় যুক্ত হন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত একটানা এই পত্রিকায় চার দশকেরও বেশি সময় কাজ করে গেছেন তিনি। ওই বছর অবসর নিলেও বিভিন্নসময় সাহিত্য পাতার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ তিনি দিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক রাশেদ রউফ।

সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের ‘গুরুজন’ হিসেবে বিবেচিত অরুণ দাশ গুপ্ত অনুরাগীদের কাছ থেকে ‘দাদামণি’ অভিধা পেয়েছিলেন। সাহিত্য জগতের শাখা-প্রশাখায় দাপটের সঙ্গে বিচরণ করলেও তার প্রকাশিত গ্রন্থ মাত্র দু’টি। একটি ‘রবীন্দ্রনাথের ঋতুর গান ও অন্যান্য’ এবং আরেকটি ‘যুগপথিক কবি নবীন চন্দ্র সেন’। প্রকাশ হয়নি তার কোনো কবিতার বই। তবে বিভিন্ন পত্রিকার সাহিত্য পাতা, সাময়িকী, সংকলনসহ নানা প্রকাশনায় কবিতা-প্রবন্ধ নিয়মিত লিখে গেছেন।

সাহিত্য অঙ্গনের এই বিদগ্ধজন আবার দেশের সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

কবি ও সাংবাদিক অরুণ দাশ গুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (১০ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় বিষয়টি বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

অরুণ দাশ গুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শোকবার্তায় উপমন্ত্রী বলেন, ‘অরুণ দাশ গুপ্ত কবিতা, চিত্রকলা, ছোটগল্প, সঙ্গীত সবক্ষেত্রে অবাধ বিচরণ করেছেন। চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে অনেক লেখক গড়ে তুলেছে আজাদী। তার পেছনের কারিগর ছিলেন অরুণ দাশগুপ্ত। তিনি বিএফইউজের সহ-সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্লোভ ও নিরহংকারী ব্যক্তি ছিলেন। নিজের জ্ঞানের আলোয় সমাজকে আলোকিত করেছেন। তার মৃত্যুতে আমরা একজন গুণিজন হারালাম।’

কবি অরুণ দাশগুপ্তের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘অরুণ দাশ গুপ্তের মতো একজন সাহিত্যিক ও বরেণ্য সাংবাদিকের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে যে শূন্যতা তৈরি হল তা সহজে পূরণ হবার নয়।’

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আরও শোক প্রকাশ করেছেন, ট্রেজারার একেএম তফজল হক, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহীত উল আলম, ব্যবসা-শিক্ষা অনুষদের অমল ভূষণ নাগ, প্রকৌশল ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর তৌফিক সাঈদ, রেজিস্ট্রার খুরশিদুর রহমান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শেখ মুহাম্মদ ইব্রাহিম।

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ, শহীদুল আলম, আবদুস সামাদ লাভু, রেমন্ড আরেং, হাসিনা মহিউদ্দিন, সাবিহা মুসা এবং বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীনও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এক শোকবার্তায় বলেন, ‘কবি ও সাংবাদিক অরুণ দাশ গুপ্ত চট্টলবাসীর অহংকার। একজন অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক হিসেবে তিনি শুদ্ধ মননের বিকাশ ও জ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তির অভিভাবক হিসেবে আমাদের সকলের আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন। তার মৃত্যুতে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।’

চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার শোক জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদও সংগঠনের প্রবীণ সদস্যের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া উদীচী চট্টগ্রাম, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, বোধন আবৃত্তি পরিষদসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন শোক জানিয়ে বিবৃতি পাঠিয়েছে।

নিজ গ্রাম ধলঘাটের প্রয়াত অরুণ দাশ গুপ্তের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় বলে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

অরুণ দাশগুপ্ত টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর