বেসিস নির্বাচন শনিবার
৩০ মার্চ ২০১৮ ২০:০০
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: শনিবারই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস-এর (বেসিস) নির্বাচন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাওরান বাজারের বিডিবিএল ভবনের পাহারায় থাকবে র্যাব ও পুলিশ।
শনিবার (৩১ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। নির্বাচনে ডিজিটাল প্রচারণা প্রাধান্য পেলেও কোনো কোনো প্রার্থী ভোটারদের সঙ্গে দেখা করে কিংবা ফোনে ভোট চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
তথ্য প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ এই সংগঠনের নির্বাচনের দিকে চোখ সবার। মোট নয় জনের বেসিস পরিষদ নির্বাচন করা হবে। এরা প্রত্যেকে পরিচালক পদে নির্বাচিত হবেন। যার মধ্য থেকে পরে একজন সভাপতি নির্বাচন করবেন নির্বাচিত পরিচালকরাই। পরিচালকদের মধ্যে ৮ জন নির্বাচিত হবেন বেসিসের সাধারণ সদস্যদের ভোটে। আর একজন পরিচালক নির্বাচিত হবেন অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের ভোটে। সবশেষ জানা তথ্যে বেসিসে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ভোটার রয়েছেন ৪৭৪ জন। আর অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের মধ্যে ভোটার রয়েছেন ২১৪ জন।
ভোটের মাত্র তিন দিন আগে ২৭ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিলে তীব্র হয় নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা-সমালোচনা। বেসিসের সাধারণ সদস্য ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের কাছ থেকেও আসে নানা মন্তব্য।
নির্বাচন স্থতিতের আদেশে গত মঙ্গলবার নড়েচড়ে বসে বেসিস বোর্ড সদস্যরা।
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুবিভাগ ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেড অর্গানাইজেশনে (ডিটিও) অভ্যন্তরীণ শুনানি করবে বলেও ঘোষণা আসে। যদি শুনানির সুযোগ পাওয়া না যায় তবে হাইকোর্টে রিট করা হবে- জানিয়েছিলেন বেসিস নির্বাচন বোর্ডের প্রধান এস এম কামাল।
একই সঙ্গে জরুরি ওই বৈঠক শেষে মঙ্গলবার রাতেই নির্বাচন বোর্ডের প্রধান ও প্রতিদ্বন্দ্বি তিন প্যানেলের প্রধানরা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় বেসিস সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রীর অনুরোধে বাণিজ্যমন্ত্রী নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার মৌখিক নির্দেশ দেন।
পরে বুধবার দুপুরে ডিটিও’র স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি হাতে পান বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। চূড়ান্তভাবে জানা যায়, ৩১ মার্চই নির্বাচন হচ্ছে। বোর্ডের কোনো কোনো পরিচালকের অভিযোগ নির্বাচন নিয়ে বেসিসের এক শ্রেণির সদস্যই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছিল।
বেসিস সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনায় কাওরানবাজারের বিডিবিএল ভবনে কড়া পাহারায় থাকবে র্যাব ও পুলিশ। ভবনটির নিচতলায় থাকবে নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্তরা। ভোটাররা সেখান থেকে নির্দিষ্ট আইডি কার্ড নিয়ে বেসিস কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোট কেন্দ্রে ভোটার ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। সাংবাদিক প্রবেশেও থাকবে কিছুটা কড়াকড়ি, লাগবে বেসিসের নির্দিষ্ট প্রেস কার্ড। জানা গেছে, নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই প্রচার প্রচারণা বন্ধ রয়েছে।
বেসিসের নির্বাচন বোর্ডটি তিন সদস্য বিশিষ্ট। এবারের নির্বাচন বোর্ডের প্রধান বেসিসের সাবেক সভাপতি এস এম কামাল। আর নির্বাচন প্যানেলে তিন সদস্যের আপিল বোর্ড রয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন পরিচালনায় বেসিসের ২০ সদস্য যুক্ত রয়েছেন।
২০১৮-২০ সেশনের নির্বাচনে টিম হরাইজন, টিম দুর্জয়, উইন্ড অব চেঞ্জ নামে তিনটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
বেসিসের ৯ সদস্যের পর্যদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪০ জন। যার মধ্যে সাধারণ সদস্য ক্যাটাগরিতে ৩৪ জন এবং অ্যাসোসিয়েট হিসেবে ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচন বোর্ড ১২ মার্চ বৈধ তালিকা ও ১৭ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে।
বেসিসে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ভোটার রয়েছেন ৪৭৪ জন। আর অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের মধ্যে ভোটার রয়েছেন ২১৪ জন।
টিম হরাইজন: টিম হরাইজন নামে প্যানেলটি নতুন-পুরাতনের সমন্বয়ে গঠিত বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। টিমটিতে বর্তমান বোর্ড থেকে যেমন সদস্যরা এসেছেন তেমনি এসেছেন একদম নতুনরাও। সদস্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ৩:৩:৩ পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে।
টিম হরাইজন প্যানেলে সৈয়দ আলমাস কবীরের সঙ্গে রয়েছেন ইউওয়াই সিস্টেমস লিমিটেডের চেয়ারপারসন ও সিইও ফারহানা এ রহমান, বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের ডিরেক্টর শোয়েব আহমেদ মাসুদ, সফট পার্কের প্রধান নির্বাহী দেলোয়ার হোসেন ফারুক, জানালা বাংলাদেশ লিমিটেডের এমডি তানজিদ সিদ্দিক স্পন্দন, স্পেক্ট্রাম সফটওয়্যার অ্যান্ড কনসালটিং লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার মুশফিকুর রহমান, ক্রসওয়েস আইটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ফাহিম তানভীর আহমেদ, শুটিং স্টার লিমিটেডের এমডি দিদারুল আলম এবং ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাশাদ কবির।
উইন্ড অব চেঞ্জ: প্যানেলটির স্লোগান ‘নতুন উদ্যমে, নবরূপে’। এর নেতৃত্ব রয়েছে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা। এরই মধ্যে বেসিস নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে তিনি ব্যাংকটিকে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উইন্ড অব চেঞ্জ’ প্যানেলে লুনা শামসুদ্দোহার সঙ্গে রয়েছেন ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, ডিভাইন আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ফকরুল হাসান, এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড সিইও আবুল দাউদ খান, স্টার কম্পিউটার সিস্টেম লিমিটেডের ডিরেক্টর ও সিওও রেজওয়ানা খান, ইনোভেশন ইনফর্মেশন সিস্টেম লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ সানোয়ারুল ইসলাম, রাইট ব্রেইন সল্যুশন লিমিটেডের সিইও নূর মাহমুদ খান এবং এআর কমিউনিকেশনস প্রধান নির্বাহী এম আসিফ রহমান।
টিম দুর্জয়: গত ১৪ মার্চ ‘উন্নয়নের ধারায় ঐক্যবদ্ধ’ স্লোগানে ‘টিম বিজয়’ নামে প্যানেল ঘোষণা করেন মোস্তফা রফিকুল ইসলাম ডিউক (ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক)। পরে গত ১৫ মার্চ টিম বিজয় নাম পাল্টে টিম দুর্জয় ঘোষণা করে তারা। টিম দুর্জয় প্যানেলে আরও রয়েছেন- অ্যাটম এপি লিমিটেড ম্যানেজিং ডিরেক্টর এমকেএম আহমেদুল ইসলাম বাবু, এলিয়েন টেকনোলজি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ, সল্যুশন নাইন লিমিটেডের এমডি শহিবুর রহমান খান, স্টার হোস্ট আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী জাহিদুল আলম, স্পিনফ স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা সিইও এএসএম আসাদুজ্জামান, চালডাল লিমিটেড প্রধান অপারেশন অফিসার (সিওও) জিয়া আশরাফ, রেইজ আইটি সল্যুশন লিমিটেডের এমডি কেএএ রাশেদুল মাজিদ এবং জামান আইটির সিইও জামান খান।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এটি
বেসিসে জমেছে ভোটযুদ্ধ, ৩ প্যানেলে ২৭, স্বতন্ত্রে ২ প্রার্থী
শুনানি চাইবে বেসিস, না পেলে রিট
হঠাৎই স্থগিত বেসিসের নির্বাচন
বেসিস নির্বাচন নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ
বেসিস নির্বাচন নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ
বেসিসের ভোট, নানা প্রশ্নের মুখে লুনা শামসুদ্দোহা