পরীক্ষার বিকল্প উপায় খুঁজছে সরকার
১১ জুলাই ২০২১ ১৪:৫৩
ঢাকা: সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সরাসরি ক্লাসে পড়িয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে মূল্যায়নের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, সে পরিকল্পনা থেকে আপাতত সরে এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার উপায় খোঁজা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পিছিয়ে হলেও তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে পরীক্ষা নেওয়ার। কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয় তবে বিকল্প কী ব্যবস্থা হতে পারে এ নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা কাজ করছেন। শিগগিরই শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে সকলের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষ ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে শিক্ষাবোর্ড। এতে
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৮৪ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হয়। পরিকল্পনা ছিলো স্কুল খোলার পর এই সিলেবাস নিয়ে যতটুকু পাঠদান সম্ভব হবে তার ওপরেই পরীক্ষা নেওয়া হবে। স্কুল খোলার পর বিষয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ ৩০ দিনে ক্লাস নেওয়া হবে। আর এ সময়ে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল আমরা ক্লাস নেব। তারপর পরীক্ষা নেব। এখন যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে ক্লাস নেওয়াটা কতটুকু সম্ভব হবে এটি নিয়ে আমাদের বিকল্প চিন্তা ভাবনা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘সময় পিছিয়ে হলেও আমরা চেষ্টা করব পরীক্ষা নেওয়ার। কিন্তু সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে নেহাত সম্ভব না হলে বিকল্প মূল্যায়নের চিন্তাভাবনা রয়েছে। এখন কোন পদ্ধতিতে নেব, না নেব সেজন্য আমাদের বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। আবার পরীক্ষার বিকল্প উপায় কী হতে পারে সেদিকও চিন্তা করা হচ্ছে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা কাজ করছেন, নিশ্চয়ই তারা আমাদের একটা পথ দেখাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়েও আগে থেকে কিছুটা প্রস্তুতিও রয়েছে আমাদের।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করে তাদেরকে পরের ধাপে উন্নীত করা হয়েছিল। ওই সময়ে মূল্যায়ন সংক্রান্ত কমিটি এবং কাঠামো তৈরি আছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই পরীক্ষার বিকল্প মূল্যায়নের চিন্তায় অ্যাসাইনমেন্টকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি দুইটা কারণে। একদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মানসিক চাপের তৈরি হয়েছে তার কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলের সংস্পর্শে থাকে। এটার আলোকে যাতে বৈষম্য কমিয়ে পড়াশুনার স্রোতের মধ্যে আনা যায়, সে জন্যই এই উদ্যোগ। অ্যাসাইনমেন্টের উছিলায় যদি ছেলে মেয়েগুলো পড়াশোনার ট্রাকে ফিরে আসে। দ্বিতীয়ত এই অ্যাসাইনমেন্ট পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। আমরা যদি পরীক্ষা নিতে না পারি তখন অ্যাসাইনমেন্ট যদি মূল্যায়ন করি সেটার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে বড় কথা অ্যাসাইনমেন্ট এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সবার সহযোগীতা নিক। পড়াশুনার মধ্যে থাকুক। এ কারনে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর গত জুন মাসে বিদ্যালয়গুলো খুলে দিয়ে সেখানে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি পাঠদানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ অধিবেশনে বলেছেন, বিদ্যালয় খুলে দিয়ে শিশুদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া যাবে না।
সব কিছু মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে অভিভাবকদের পাশাপাশি চিন্তিত সরকার। যদি পরীক্ষার ব্যবস্থা না করা যায় তবে এবার কোন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে তা নিয়ে বিশ্লেষন চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ নিয়ে শিগগিরই শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কথা বলবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা এবং এইচএসসি পরীক্ষা ১ এপ্রিল শুরু হয়ে আসছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসের দুটি পাবলিক পরীক্ষার একটিও নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মার্চে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। ওই বছর শিক্ষার্থীদের আগের রেজাল্ট মূল্যায়ন করে অটোপাসের মাধ্যমে পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল।
সারাবাংলা/জেআর/একে