ঢাকা: বিএনপি মনে করে, হাসেম ফুডসের ঘটনা প্রকৃতপক্ষে হত্যার পর্যায় পড়ে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থা কলকারখানার নির্মাণ মান, পরিবেশ এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, নিয়মিত পরিদর্শন ও নজরদারি না করার কারণেই এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
রোববার (১১ জুলাই) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টি তুলে ধরেন।
ফায়ার বিগ্রেডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘ফায়ার বিগ্রেডের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। ২৭ ঘণ্টা যাবত আগুন নেভাতে না পারা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল জানান, শনিবার (১০ জুলাই) দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫২ জন শিশু, কিশোর ও মহিলা শ্রমিকদের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করা হয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার চরম অবহেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পরামর্শ কমিটির কারফিউ জারির পরামর্শ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, কারফিউ জারি কোনো সমাধান নয়। এই লকডাউনেও যদি সঠিকভাবে সাধারণ মানুষের অর্থের ব্যবস্থা করতে না পারেন এবং সেখানে যদি তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারেন, তাহলে ওই অপরিকল্পিত কারফিউও তো সঠিক সমাধান আনতে পারবে না।’
ফখরুল বলেন, ‘পর পর যে সরকারি ছুটি, লকডাউন, কঠোর লকডাউন হয়েছে- সেগুলোতে সেইভাবে সামাজিক দূরত্ব, শারীরিক দূরত্ব, সৃষ্টি করা সম্ভব হয় নাই। লকডাউনে কী দেখা যাচ্ছে? মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে, বলা যায় যে, অনেকে খাদ্যের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘লকডাউনের লক্ষ্যটা হচ্ছে- মানুষকে মানুষের কাছ থেকে দূরে রেখে, দূরত্ব সৃষ্টি করে সংক্রমণটা প্রতিরোধ করা। সেটার জন্য তো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোথায় সেই সচেতনতা? খালি ধমক দিয়ে আর গরিব মানুষকে জেলের মধ্যে পুরে দিলে তো হবে না।’
ফখরুল বলেন, “আজকে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষ কোনো রকমের সহযোগিতা পাচ্ছে না। ইনফরমাল সেক্টর তো এমনিতেই ছোট ছোট পূঁজি নিয়ে কাজ করে। দুইবার লকডাউনের ফলে এই ক্ষুদ্র মানুষগুলো তাদের পূঁজি হারিয়ে ফেলেছে, তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে, পথে বসে গেছে।”
ঢাকার সিভিল সার্জন জেলার সব হাসপাতালে সাংবাদিকদের করোনা সংক্রান্ত কোনো তথ্য না দিতে যে সার্কুলার জারি করেছেন তার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই ধরনের সার্কুলার প্রমাণ করে যে, তারা (সরকার) প্রকৃত তথ্য গোপন করছে এবং করতে চায়। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা সরকার প্রকাশিত সংখ্যার চাইতে অনেক বেশি। এই ধরনের তথ্য গোপনের প্রচেষ্টা স্বাধীন গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র পরিপন্থী।’
করোনা মোকাবিলায় বিএনপির দেওয়া আপতকালীন কমিটি গঠনসহ ৫ দফা প্রস্তাব সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনার সুনির্দিষ্টভাবে বলুক কোনটা কোনটা বাস্তবায়ন করেছেন। চর্বিত চর্বণ তো প্রতিদিন উনারা করছেন। তাদের সমস্যাটা হচ্ছে যে, তারা কোনো সমালোচনা শুনতে চান না। আমরা শুধুমাত্র সমালোচনা করি না, পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের প্রস্তাবও দেই। এই যে তাদের একলা চলো নীতি, দুর্নীতি করো নীতি, লুটপাট করো নীতি এটাই তো এই দেশটাকে, এই জাতিকে চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’
করোনা মোকাবিলায় সরকারের ওয়ার্ড পর্যায় কমিটি গঠন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন আবার ওয়ার্ড কমিটিতে দুর্নীতি শুরু হবে। ওখানে টাকা-পয়সা ভাগ করে নেবে আরকি। আমরা মনে করি এটা ফিজিবল না। আমরা বলেছি যে, সরকারের যে হাসপাতালগুলো আছে সেগুলো ইকুইপ্ট করুক, সেই হাসপাতালগুলোতে বেড সংখ্যা বাড়াক, ডাক্তার বাড়াক, সেই হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবারহ করুক, আইসিইউ বেড রাখুক তাহলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এমন তো না যে, সমস্যা অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে তা তো না। হাসপাতালগুলোতে সুবিধা বাড়ালে মানুষ চিকিৎসাটা নিতে পারবে আর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি করবে কি জন্যে? কারণটা কী?’
ঠাকুরগাঁওয়ে টিভি চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা তানভীর হাসান তনুকে ডিজিটাল আইনে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।