সন্ধান নেই উত্তরপত্রের, পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দায় এড়াচ্ছে সবাই
১২ জুলাই ২০২১ ০০:৫২
নোবিপ্রবি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্রের সন্ধান মিলছে না। চারমাস আগে শেষ হওয়া পরীক্ষার রেজাল্ট অপ্রকাশিত থাকায় এর কারণ অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে এসেছে।
অভিযোগ আছে, আইন অনুযায়ী ৪০ দিনে ফল প্রকাশের নিয়ম থাকলেও আইন লঙ্গন করে ফল প্রকাশে চার মাসের অধিক সময়ক্ষেপণ করে ফেলেছে বিভাগটি। তবু অপ্রকাশিতই রয়েছে পরীক্ষার ফলাফল।
এদিকে রেজাল্ট দিতে না পারা ও উত্তরপত্রের সন্ধানের বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটি।
পরীক্ষার নোটিশ অনুযায়ী জানা যায়, ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১১ মার্চ পর্যন্ত ৬ কোর্সের এই পরীক্ষার ৩টি কোর্স সম্পন্ন হয়। কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেলে ১ বছর গ্যাপ দিয়ে অবশিষ্ট ৩ কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ৭ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
করোনা সংক্রমণের আগে অনুষ্ঠিত হওয়া ২০২০ সালের শুরুর দিকের তিনটি কোর্স MBPG 1109, MBPG 1117 ও MBPG 1119 পরীক্ষার উত্তরপত্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। নোবিপ্রবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, বিভাগ খাতা নিয়ে গিয়েছে।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ওই পরীক্ষার এই খাতাগুলো বিভাগ পর্যন্ত আসেনি।
এই কোর্সসমূহের পরীক্ষকদের অভিযোগ, এই তিনটি কোর্সের উত্তরপত্র তথা পরীক্ষার খাতা দিতে পারেনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর। দেশে মহামারির কারণে পরীক্ষার পরপর খাতা সংগ্রহ করা হয়নি তাদের। পরবর্তীতে ২০২০ এর আগস্ট মাসের দিকে লকডাউন উঠে গেলে পরীক্ষকদের পক্ষ থেকে একাধিকবার এই দফতরে যোগাযোগ করলে তারা পরীক্ষার খাতাসমূহ দিতে পারে নি। বারবার যোগাযোগ করলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর জানায়, খাতা পাওয়া যাচ্ছে না।
ফলে ওই তিন কোর্সের পরীক্ষকরা তাদের নির্ধারিত কোর্স পরীক্ষার উত্তরপত্র সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি জানিয়ে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরকে তারা মেইল পাঠান তারা। মেইল পাঠানোর দশ মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তারা মেইলের রিপ্লাই পাননি এবং বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারেও জানানো হয়নি তাদের।
এ বিষয়ে ‘MBPG 1119 কোর্সে’র পরীক্ষক ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রভাষক মাহীন রেজা বলেন, ‘অন্য একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে গেলে তারা উত্তরপত্র দিতে পারেনি। বিষয়টি জানতে পেরে আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর ও সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানকে মেইল করেছি। এখন পর্যন্ত মেইলের রিপ্লাই পাওয়া যায়নি।’
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রভাষক ও ‘MBPG 1109 কোর্সে’র পরীক্ষক সাদিকুর রহমান শুভ বলেন, ‘দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পূর্বে আমার কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহামারি পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়াতে তখন উত্তরপত্র সংগ্রহ করা হয়নি। প্রথম লকডাউন উঠে যাওয়ার পর খাতা সংগ্রহ করতে গেলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর জানিয়েছে, উত্তরপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। পরবর্তীতে বিষয়টি জানিয়ে আমাদের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে মেইল করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই মেইলের কোন রিপ্লাই আসেনি। এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা আমার জানা নাই।’
অপরদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছে, পরীক্ষার হল থেকেই পরীক্ষকদের উত্তরপত্র দেওয়া হয়েছে। খাতা দেখা শেষে ফলাফল রেডি করে তারা আমাদের কাছে একটি কপি পাঠাবেন এবং উত্তরপত্র পাঠিয়ে দিবেন।
বিষয়টি অস্বীকার করে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. ফিরোজ আহমেদ বলেছেন, ‘আমার এই কোর্সসমূহের শিক্ষকরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর থেকে উত্তরপত্র পায়নি। পরবর্তীতে আমি বলার পর তারা মেইল করে বিষয়টি জানিয়েছে। আপাতত লকডাউনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। লকডাউন উঠে গেলে এটি নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীদের দ্রুত পাস করে বের করা দরকার। আমরা দ্রুত সমস্যাটির সমাধান করে শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশের চেষ্টা করব।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব অধ্যাপক ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী হল থেকে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি যেকোনোভাবে উত্তরপত্র সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরিত পেপারসহ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে প্রেরণ করবেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে খাতা সংগ্রহ করবেন পরীক্ষকরা।’
পরীক্ষার খাতা সংক্রান্ত দায়িত্ব থাকে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ওপর। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে তা সভাপতির ওপরেই বর্তাবে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের অবসানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান। তিনি বলেন, ‘কমিটি সঠিকভাবে তদন্ত করলেই আসল সত্য উদঘাটিত হবে।’
সারাবাংলা/এমও