Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা দক্ষিণে ৪টির টাকায় তৈরি হচ্ছে ৮টি কমিউনিটি সেন্টার

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ জুলাই ২০২১ ১০:১০

ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ১০ তলা তিনটি ও ৯ তলা একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। একপর্যায়ে গিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বুঝতে পারেন, এরকম বহুতল ভবন তৈরি হলে ফ্লোর স্পেসের সদ্ব্যবহার হবে না। সে কারণে চারটি কমিউনিটি সেন্টারকেই ছয় তলা করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। তাতে প্রকল্পের যে অর্থ সাশ্রয় হয়, তা দিয়ে ছয় তলা তিনটি ও পাঁচ তলা একটি— অর্থাৎ নতুন চারটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিএসসিসি’র ১৫, ১৬, ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন এই কমিউনিটি সেন্টারগুলো তৈরি হবে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির বিভাগীয় মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। গত ৩১ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে প্রকল্প সংশোধনের ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী রয়েছে সারাবাংলার হাতে।

সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সই করা কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ডিপিইসি সভায় আলোচনার শুরুতে প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এসময় ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ১০ তলা তিনটি এবং ৯ তলা উচ্চতার একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু এমন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে ফ্লোর স্পেস সম্পূর্ণ ব্যবহার হবে না।

এ কারণে ব্যাংকুয়েট হল, কাউন্সিলর কার্যালয়, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, ব্যায়ামাগার, লাইব্রেরি, সংগীত শিক্ষা কেন্দ্র, আর্ট কোচিং ইত্যাদির জন্য কমিউনিটি সেন্টারগুলোর সবগুলোই ছয় তলা উচ্চতার করার প্রস্তাব করা হয়। এ ক্ষেত্রে যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তা দিয়ে অন্য চারটি ওয়ার্ডে নতুন চারটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ সম্ভব বলে জানানো হয়। তবে এই চারটির মধ্যে তিনটি হবে ছয় তলা, একটি পাঁচ তলা উচ্চতার। অর্থাৎ চারটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের প্রকল্পের খরচেই নির্মাণ করা হবে আটটি কমিউনিটি সেন্টার।

ফরিদ আহাম্মদ বলেন, এই সংশোধনী প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন না হলেও বাড়তি সময় লাগবে। চলতি বছরের জুনে এই প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও এক বছর বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডিএসসিসি’র চারটি ওয়ার্ডে চারটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ৩ জুলাই ২৬৮ কোটি ৭৫ লাখ ৯৫ লাখ টাকায় প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছরে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। ওয়ার্ড পর্যায়ে সামাজিক আচার অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিনোদনমূলক, সামাজিক কল্যাণ ও সামাজিক যোগাযোগের সুবিধা দিতে সেন্টারগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাশাপাশি জনসেবা, সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নতমানের কমিউনিটি সেবা দেওয়া, কমিউনিটি সেন্টারকে সমাজ উন্নয়ন ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের যোগসূত্র হিসেবে তৈরি, প্রাকৃতিক দূর্যোগে জরুরি আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা এবং এলাকার মানুষের জীবন-যাত্রার মান ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নও প্রকল্পটির লক্ষ্য।
জানা গেছে, বর্তমানে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় মূল অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয় থেকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা কম করে আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় করে ২৬৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৯ হাজার এবং মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করে প্রথমবার সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। ব্যয় বাড়ছে না, প্রকল্পের উদ্দেশ্যই পরিবর্তন হচ্ছে না— এ কারণে পরিপত্রের অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প সংশোধনী অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা) আবু মো. মহিউদ্দিন কাদেরী।

প্রস্তাবিত সংশোধনে নতুনভাবে প্রস্তাবিত চারটি কমিউনিটি সেন্টারের এরিয়া, ব্যয় প্রাক্কলের ভিত্তি এবং নিজস্ব জায়গা আছে কি না— এ বিষয়ে সভায় জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রস্তাবিত চারটি কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে তিনটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব খালি জায়গায় নির্মাণ করা হবে। কামরাঙ্গীর চরের জায়গাটি বিআইডব্লিউটিএ’র জায়গা। এ বিষয়ে মেয়রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই জায়গাটি পাওয়া যাবে।

সভায় চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প এলাকায় র্যাবের অস্থায়ী কার্যালয় থাকায় তা হস্তান্তরে সময়ের প্রয়োজন ছিল। এ কারণে সাইট সময়মতো বুঝিয়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রকল্পের বাস্তাব অগ্রগতি শ্লথ হয়েছে। বিষয়টি সমাধান হওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি ভবিষ্যতে বাড়বে বলে সভায় জানান তিনি।

বিস্তারিত আলোচনা শেষে প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পটি ২৬৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। এসময় বলা হয়, কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে প্রকল্পের যাবতীয় কাজ নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রকল্পটি সংশোধনের যৌক্তিকতা বিস্তারিতভাবে আরডিপিপিতে (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখ করতে হবে এবং উল্লিখিত সিদ্ধান্ত অনুসারে আরডিপিপি পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাতে হবে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

কমিউনিটি সেন্টার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর