Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উভয় সংকটে জেলেদের জীবন-জীবিকা

আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ জুলাই ২০২১ ১১:১৩

জামালগঞ্জ: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হাওর ও জলাশয়ে অবাধে চলছে অবৈধ কোনা জালের ব্যবহার। এর মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশবিস্তার ভয়ংকরভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে নিষিদ্ধ জালে রেণু পোনাসহ মা মাছ আটকা পড়ে মাছের বংশ বিস্তার রোধ হচ্ছে অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে হাওর পারের কর্মহীন জেলেদের জীবন-জীবিকা নিয়ে উভয় সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

নানা বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও পেটের তাগিদে প্রতিনিয়তই জেলেদের জাল নিয়ে হাওরে বের হতে হয়। এতে করে জলাশয়ে দিন দিন মাছের উৎপাদন ব্যাপক হারে কমতে শুরু করেছে। মাছের বংশ বৃদ্ধিকল্পে অবৈধ কোনা জালের ব্যবহার ঠেকাতে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি প্রকৃত জেলেদের বেছে বেছে সরকারি অনুদানের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন মৎস্যজীবীসহ সচেতন মানুষেরা।

বিজ্ঞাপন

কয়েকজন মৎস্যজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ অঞ্চলের জেলেদের আয় রোজগারের অন্যতম মৌসুম হচ্ছে বর্ষা। বছরের বাকি সময়টা কৃষিকাজের পাশাপাশি ছোটখাট অন্যান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকার ও বিক্রিটাকেই তারা প্রধান পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। তবে এ বছর হাওর ও নদীতে মাছ তেমনটা না থাকায় তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কোনা জালের মতো মৎস্য প্রজনন বিস্তার রোধক মাধ্যমগুলোই যে দায়ী, সেটা অকপটে স্বীকার করে জীবিকা নির্বাহে এ ছাড়া তাদের আর কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন নিরুপায় মৎস্যজীবীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম, বেহেলী আলীপুর, গোপালপুর, নিতাইপুর, ফেনারবাঁক ইউনিয়নের কামধরপুর, আলীপুর, আমানীপুর (বর্মণ পাড়া), জামলাবাজ, শুকদেবপুর, যশমন্তপুর, শ্রীমোহন্তপুর, তায়েবনগর, কৃষ্ণপুর, রাজাপুর (মুসলিম পাড়া), নাজিমনগর, জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, নয়াহালট (একাংশ), জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের আলীপুর, শরীফপুর, ঝুনুপুর, ইনচানপুর, হোসেনপুর, মাসুমপুর, উত্তর কামলাবাজ (একাংশ), ভীমখালী ইউনিয়নের মল্লিকপুর ও সাচনা বাজার ইউনিয়নের হরিহরপুর, ব্রাহ্মনগাঁওসহ প্রায় ৩০-৩৫টি গ্রামের অসংখ্য পরিবার আছে যারা মৎস্যজীবী হিসেবে পরিচিত। মাছ শিকারই যাদের অন্যতম পেশা। বর্ষাকালে মাছ শিকার করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। অন্যদিকে হেমন্তকালে তাদের নাম ব্যবহার করে সরকারি ইজারাযোগ্য জলাশয় ইজারা নেয় সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা। যাতে করে বঞ্চিত হয় প্রকৃত মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। এ নিয়েও জেলেদের মাঝে চাপা ক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে বেহেলী ইউনিয়নের গোপালপুর ও নিতাইপুর গ্রামের মৎস্যজীবী নিরঞ্জন দাস ও রামধন দাস বলেন, কোনা জালে মাছ মারা নিষেধ; এইডা জাইন্যাও আমরা এই জাল দিয়াই মাছ ধরি। মাছ মাইরা না বেচলে যে বউ-বাচ্চারা উপস থাকব। তাই রাইতের বেলায় মেঘ-বৃষ্টি তুফানের মাঝেই জাল টানি। তবে আগের মতো মাছ উডে না। যা উডে তা দিয়া চলতে খুব কষ্ট হয়। একটা নিলে আরেকটা নেওন যায় না। আমরার মতো মানুষরারে সরকারি সাহায্য দিলে খুব ভালা হয়।

জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ঝুনুপুর গ্রামের জেলে মো. শাহানূর জানান, বর্ষাকালে মাছ ধরাই তাদের একমাত্র ভরসা। বৈধ-অবৈধ চিন্তা করে তাদের জীবন চলে না। সপ্তাহ পনেরো দিন আগে নৌপুলিশ গিয়ে ওই এলাকার কয়েকজন জেলের জাল নিয়ে আসে। এতে তারা মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। এ অবস্থায় যদি তাদের মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। তার মতো অসচ্ছল অসহায় মৎস্যজীবীদের ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

জেলেদের জীবন-জীবিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বেহেলী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের নাহিদ মিয়া জানান, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকার ছাড়া জেলেদের আর কোনো পেশা নেই। এরা বেশিরভাগই নিরক্ষর। জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ সেটা তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। পরিবার-পরিজনের মুখে অন্ন যোগাতে বাধ্য হয়েই রাত-বিরাতে ঝড়-ঝাপটায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানিতে নামে তারা। যদিও এতে মাছের বংশ বিস্তার রোধ হচ্ছে, তারপরও কিছু করার নেই। তবে সরকারি তরফ থেকে প্রকৃত জেলেদের দেখে দেখে অন্তত বর্ষা মৌসুমে যদি ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয় তাহলে কিছুটা উপকৃত হবে তারা।

উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন পুরকায়েস্থ বলেন, জেলেরা কোনো সময়ই কোন ধরনের সাহায্য সহায়তা পায় না। করোনাকালীন সময়ে অন্যান্য পেশাজীবী মানুষেরা কমবেশি ত্রাণ সহায়তা পেলেও মৎস্যজীবীরা এক্ষেত্রে বঞ্চিত। তাই জীবিকার তাগিদে আইন অমান্য করেই তারা নিষিদ্ধ জালে মাছ শিকার করছে। এক্ষেত্রে মাছের বংশ বিস্তার নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। হাওর পারের জেলেদের জীবনমানের কথা চিন্তা করে সরকারি সাহায্য সহযোগিতার খুবই প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, মাছের বংশ বিস্তার সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধিতে মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের লোক দিয়ে জেলেদের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হবে। এছাড়া অবৈধ কোনা জালের ব্যবহার বন্ধে মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হবে। জেলেদের সরকারি সাহায্য সহায়তার আওতায় আনতে স্ব স্ব ইউনিয়নে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত জেলেদের তালিকা করে আগামী ঈদের আগেই একটা বড় ধরনের সহায়তার প্রস্তুতি চালানো হয়েছে।

সারাবাংলা/এএম

জামালগঞ্জ জেলেদের জীবন-জীবিকা টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর