কোটি টাকা গৃহঋণ পাবেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা
১২ জুলাই ২০২১ ১৫:৩৭
ঢাকা: সরকারি কর্মচারী, অধস্তন আদালতের বিচারক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পর এবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সরল সুদে গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ সুবিধার আওতায় এলেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে গত ২৭ জুন এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়। এটিকে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগনের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা’ নামে অবহিত করা হয়েছে। এ নীতিমালা ১ জুলাই ২০২১ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে।
নীতিমালায় সুদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার হবে সবোর্চ্চ ৯ শতাংশ সরল সুদ অর্থাৎ সুদের ওপর কোনো সুদ আদায় করা যাবে না। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা ব্যাংক রেটে সমহারে সুদ পরিশোধ করবেন।
জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক রেটের হার ৪ শতাংশ। সুদের বাকি অর্থ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে।
ঋণ প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন তফসিলি ব্যাংকসমূহ, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন এবং পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ হচ্ছে-ইসলামী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, স্টান্ডার্ড ব্যাংক। এ ছাড়া সরকার অন্য যে কোনো বাণিজ্যিক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবায়নকারী সংস্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে এ ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
গৃহনির্মাণ ঋণের অর্থ বলতে বাড়ি (আবাসিক) নির্মাণের জন্য একক ঋণ, জমিসহ বাড়ি ক্রয়ের জন্য একক ঋণ, জমি ক্রয়সহ বাড়ি (আবাসিক) নির্মাণের জন্য গ্রুপভিত্তিক ঋণ, বাড়ি (আবাসিক) নির্মাণের জন্য গ্রুপ ভিত্তিক ঋণ এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য ঋণকে বোঝাবে।
ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে— ঋণ গ্রহীতাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হতে হবে। গৃহ নির্মাণের জন্য আবেদনের সর্বশেষ সময়সীমা হবে অবসরে যাওয়ার এক বছর আগ পর্যন্ত। রাষ্ট্র প্রদত্ত সুদ ভর্তুকি অবসর গ্রহণের সর্বশেষ দিন পর্যন্ত প্রাপ্য হবেন। অর্থাৎ কেউ যদি ঋণ নিয়ে অবসরে চলে যান তাহলে তাকে ৯ শতাংশ হারেই সুদ পরিশোধ করতে হবে। একজন আবেদনকারী কেবলমাত্র একবারই এ নীতিমালার আওতায় গৃহ নির্মাণ ঋণ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
ঋণ প্রাপ্তির শর্তে বলা হয়েছে— এ নীতিমালার আওতায় একজন আবেদনকারী দেশের যে কোনো এলাকায় গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। ঋণ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত ভূমি ও বাড়ি/ফ্ল্যাট সম্পূর্ণ দায়মুক্ত হতে হবে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকে আবেদনকারীর একটি ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে। ওই হিসাবের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতার বেতন/ভাতা/পেনশন এবং গৃহ নির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের ঋণ বিতরণ ও কিস্তি আদায় সংক্রান্ত সমুদয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সম্পূর্ণ তৈরি ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ প্রদান করা হবে। তবে সরকারি সংস্থা কর্তৃক নির্মাণকৃত ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘সম্পূর্ণ তৈরি ফ্ল্যাট’ এর শর্ত শিথিলযোগ্য।
ঋণের মেয়াদকাল ও আদায় পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ২০ বছর। ঋণের কিস্তি ঋণ গ্রহীতার বেতন হিসাব থেকে ঋণের মেয়াদ পর্যন্ত মাসিক ভিত্তিতে কর্তন করা হবে।ঋণগ্রহীতার অবসর গ্রহণের পর সরকার কোনো সুদ ভর্তুকি প্রদান করবে না।
ঋণ গ্রহীতার মৃত্যুবরণ করলে ঋণের অপরিশোধিত কিস্তি তার প্রাপ্য আনুতোষিক হতে জমা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি আনুতোষিক দ্বারা সম্পূর্ণ ঋণ আদায় নিশ্চিত না হয়, তাহলে সুদের হার অপরিবর্তিত রেখে তার উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে ঋণের অপরিশোধিত অংশ আদায়যোগ্য হবে।
সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে ৯৮ জন বিচারপতি কর্মরত আছেন। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ছয়জন আর হাইকোর্ট বিভাগে ৯২ জন বিচারক রয়েছেন।
২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিক ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে সরকার।
এর আগে ২০১৮ সালে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। এতে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা গৃহ নির্মাণ বাবদ ঋণ প্রদানের সুবিধা রাখা হয়। সরকারি কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালার আওতায় অধস্তন আদালতের বিচারকেরাও গৃহ নির্মাণ ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের ঋণ সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অধস্তন আদালতের বিচারকেরাও সরকারি কর্মচারীদের মতো গৃহ নির্মাণ ঋণের আওতায় ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। গত ২৭ জুন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য সরল সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ সুবিধা দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় হতে পরিপত্র জারি করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে