Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগুন লাগা কারখানায় ৫ দিন পরও মানুষের হাড় মিলেছে!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ জুলাই ২০২১ ১৯:৪৮

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় দুর্ঘটনার পাঁচদিন পরও মৃত মানুষের হাড় পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে বামজোট। এতে ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি প্রক্রিয়া নিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার (১২ জুলাই) রূপগঞ্জে কর্ণঘোপে হাসেম ফুড এন্ড বেভারেজ তথা সেজান জুস কারখানা সরজমিন পরিদর্শ করেছে। এসময় নেতৃবৃন্দ কারখানার বিভিন্ন তলা ঘুরে ঘুরে দেখেন।

বিজ্ঞাপন

সেখানে কারখানার শ্রমিক ও নিহত-আহত শ্রমিকদের স্বজনরা বলেন, ৩৪ হাজার বর্গফুটের প্রতি ফ্লোরের গেট অগ্নিকাণ্ডের সময় তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল যা শ্রম আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। নেতৃবৃন্দ দেখেন কারখানার নিচ তলায় অ্যালোমিনিয়াম ফয়েল, কেমিক্যালসহ দাহ্য পদার্থের গোডাউন যা কারখানা আইনের পরিপন্থি। ৩৪ হাজার বর্গফুটের ৬ তলা কারখানায় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী কমপক্ষে ৪টি সিঁড়ি এবং বাহির হওয়ার সিঁড়ি বাইরের দিক থাকা প্রয়োজন যা ছিল না। সেখানে ২টি সিঁড়ি ভেতর দিকে ছিল যার একটি বন্ধ ছিল অন্যটিতে কোনো বৈদ্যুতিক বাতি ছিল না, সেখানে সিঁড়ি ছিল অন্ধকার ও অপ্রশস্ত, শ্রমিকদের মোবাইলে লাইট জ্বেলে উঠানামা করতে হতো।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য মানস নন্দী, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড বাচ্চু ভূঁইয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক ও বাসদ এর কেন্দ্রীয় পাঠচক্রের সদস্য আহসান হাবিব বুলবুল।

বিজ্ঞাপন

নেতারা জানান, ৪র্থ তলায় একটি কালো ভস্মিভূত স্তূপের মধ্য থেকে কয়েকটি হাড় তুলে একজন শ্রমিকের স্বজন চিৎকার করে বলে ওঠেন এটি তার মৃত মেয়ের হাড়। তার মেয়ে ওই ফ্লোরে কাজ করত।

এ ঘটনায় নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘পাঁচদিন পরে গিয়েও যেখানে মানুষের হাড়গোড় পাওয়া যায়। তাহলে দুইদিন দিন আগেই ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল কিভাবে ঘোষণা করতে পারেন সেখানে আর কোনো মৃতদেহ নেই?’

পরিদর্শন শেষে করাখানা গেটে নিহত-আহত শ্রমিকদের স্বজন, স্থানীয় জনসাধারণদের এক সমাবেশে বামজোটের নেতারা বলেন, ‘সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনা নিছক কোন দুর্ঘটনা নয়, এটি মালিক, সরকার প্রশাসনের অবহেলা, গাফিলতিজনিত ও কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। একটি কারখানা করতে হলে ২৩ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অনুমতি লাগে অথচ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে, শ্রম আইন-শিল্প আইন লংঘন করে দিব্যি কারখানা চালিয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে এ ঘটনার দায় কোনোমতেই সরকারি বিভিন্ন দফতর ও সরকার এড়াতে পারে না। ১২/১৪ বছরের শতাধিক শিশুদের দিয়ে ওই কারখানায় কাজ করানো হতো যা শ্রম আইনে নিষিদ্ধ। অগ্নিনির্বাপনের জন্য কোনো যন্ত্র ছিল না। ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টকেই-এ দায় নিতে হবে।’

নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘তদারককারী সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালন না করায় এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া তাজরীন, রানা প্লাজা, টাম্পাকো কারখানায় অগ্নি সংযোগ ও ভবন ধসের ঘটনায় মালিক-সরকার প্রশাসনের কারো বিচার ও শাস্তি না হওয়ায়ই একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে।

স্থানীয় জনগণ জানান ব্যাংক ঋণের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মালিকপক্ষ থেকেই আগুন লাগানো হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।

পরিদর্শন শেষে নেতারা সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের পরিবার প্রতি আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আজীবন আয়ের সমান অর্থাৎ ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের উন্নত চিকিৎসা-পুনর্বাসন-ক্ষতিপূরণ এবং নিহত-আহত-নিখোঁজ শ্রমিকের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের দাবি জানান। অন্য দাবিগুলো হলো নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে অগ্নিকাণ্ডের কারণ, অনিয়মসহ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা। এ ছাড়া মালিক হাসেমসহ ঘটনার জন্য দায়ী কল কারখানা পরিদর্শক, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদফদতর, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

আগুন হাসেম ফুড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর