কঠোর বিধিনিষেধেও স্বাভাবিক হয়ে আসছে যানচলাচল!
১২ জুলাই ২০২১ ২১:১০
ঢাকা: কঠোর বিধিনিষেধের দ্বাদশ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। গণপরিবহন ছাড়া বাকি সব ধরনের যানবাহনই চলাচল করছে। রাস্তায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও অন্য যেকোনো সময়ের মতোই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, অলিগলির দোকানপাটের পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানপাটও খুলতে শুরু করেছে।
সোমবার (১২ জুলাই) রাজধানীর মিরপুর রোড, শেরেবাংলা নগর, আসাদগেট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকায় মূল সড়কেও জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
সকালে ১০টার দিকে শ্যামলীর শিশুমেলা, পঙ্গু হাসপাতাল এলাকায় যানবাহনের জট তৈরি হতে দেখা যায়। সড়কে প্রচুর রিকশা চলাচল করছে। পথচারীরা বাধাহীনভাবে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছে। পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও পথচারীকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করতে দেখা যায়নি। মাঝেমধ্যে দুয়েকটি যানবাহনের গতি রোধ করে কাগজপত্র চেক করতে দেখা যায়।
শিশুমেলার ফুটপাতে বসে গামছা বিক্রি করতে দেখা গেল খুচরা বিক্রেতা হেলালকে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে মাঝ বয়সী হেলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘১২ দিন পর আইজ বাসা থেকে বাইর হইছি। এতদিন বইস্যা আছিলাম। এখন আর ঘরে খাওন নাই। কামাই না করলে খামো কী? বাঁইচ্যা থাকার জন্যই কিছুতো করা লাগবো। তাই গামছা বেচতে রাস্তায় বাইর হইছি।’
শ্যামলীর রাস্তায় ডাব বিক্রি করেন রনি মিয়া। বয়সে তরুণ রনির কাছে বিধিনিষেধের মধ্যে বেচাবিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলা বলেন, ‘এখন স্বাভাবিক সময়ের মতোই বেচাবিক্রি চলছে। লকডাউন এখন কাগজপত্রে আছে বাস্তবে নাই। যতি বাস্তবে থাকত, তাহলে তো আর রাস্তায় এত গাড়ি চলত না।’
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও আসাদগেট এলাকাতেও প্রায় একই চিত্র দেখা যায়। সেখানেও পুলিশের চেকপোস্ট আছে, তবে পথচারীকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়নি। মাঝে মধ্যে দুয়েকটি যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ট্রাফিক সদ্যস্যরা। আর সব যানবাহন স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
দুপুর ১২টার দিকে কল্যাণপুরে এক গলিতে কথা হয় রাসেল মিয়া নামের এক সবজি বিক্রিতার সঙ্গে। বিধিনিষেধের মধ্যে বেচাকেনা কেমন হচ্ছে— জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দুই-তিন দিন বেচাকেনা কম হতো। এখন ভালোই হইতেছে। বড় বড় মার্কেটে লকডাউন চলতাছে, গলির ভিতরে নাই।’
দারুস সালামে জাতীয় গণমাধ্যম ইস্টিটিউটের সামনে মাস্ক বিক্রেতা রহিমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, লকডাউনের প্রথম তিন-চার দিন রাস্তায় লোকজনের উপস্থিতি ছিল একবারেই কম। ওই সময় বেচাকেনা হতো না। এখন ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। রাস্তায় লোকজনের চলাচল আছে। আগের মতোই গাড়ি চলছে। এজন্য বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় মিরপুরের টেকনিক্যাল মোড়ে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও যানবাহনের জট। সেখানে ট্রাফিক পুলিশকেও তৎপরতাও চোখে পড়েছে। পুলিশ সদস্যদের যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। তবে সেখান থেকে একটু দূরে মিরপুর রোডের কল্যাণপুর চেকপোস্টে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও সেখানে স্বাভাবিকভাবেই যানবাহন চলাচল করছে।
টেকনিক্যাল মোড়ের চেকপোস্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জন কামরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ সকালের দিকেও রাস্তায় গাড়ির চাপ ছিল। এখনো আছে। কিছুক্ষণ পরে হয়তো একটু কমবে। বিকেলে আবার বেড়ে যাবে। এখন ব্যাংক-বিমাসহ অনেক অফিস খুলে দেওয়ার কারণে রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো যানবাহন যেন রাস্তায় বের না হয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর