শুধু কারখানা মালিক নয়, দায়িত্বশীল দফতরের প্রধানদেরও বিচার দাবি
১২ জুলাই ২০২১ ২৩:৫১
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অর্ধ শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ঢাকা কমিটি। সমাবেশে ঢাকা কমিটির নেতারা দেশের অধিকাংশ কারখানাকে শ্রমিকের মৃত্যুফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, আগুন লাগা ও ভবন ভেঙে শ্রমিক হত্যার পর যথাযথ বিচার না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে।
সিপিবি নেতারা বলেন, সেজান জুসের ওই কারখানায় আগুন লাগার ঘটনায় কেবল মালিককে নয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতরের প্রধানদেরও গ্রেফতার করতে হবে। তাদের বিচার করতে হবে। পাশাপাশি হতাহতের শিকার শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সোমবার (১২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর পল্টন মোড়ে সিপিবি’র ঢাকা কমিটির সভাপতি মোসলেহউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল, শ্রমিক নেতা কাজী রুহুল আমিন। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা কমিটির নেতা মানবেন্দ্র দেব।
সমাবেশে সিপিবি নেতারা বলেন, সরকারের দায়িত্বহীনতা ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশবিহীন এ ধরনের কারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়ার কারণে দুর্ঘটনর নামে হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। দায়িত্বহীনতার কারণে শিল্প ও শ্রমমন্ত্রীকে অপসারণের দাবিও জানান তারা।
সমাবেশে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, করোনা মহামারিতে মানুষ মাঠে নামতে পারছে না, এই সুযোগে দেশে বহু অপরাধ-অপকর্ম হচ্ছে। সেজান জুসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এদের ওপর ভরসা করা যায় না। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ও গণতদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।
শাহ আলম বলেন, লুটেরা শাসকগোষ্ঠীর উচ্ছেদ ছাড়া এসব সংকটের সমাধান হবে না। এজন্য সারাদেশে গণসংগ্রাম, গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে স্বৈরাচারি, অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন ঘটাতে হবে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সেজান জুসের কারখানায় যারা পুড়ে কয়লা হলো, তাদের অধিকাংশ শিশু-কিশোর। এই সমাজ ব্যবস্থায় বেঁচে থাকতে এই বয়সের শিশু-কিশোররা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। আর মালিক এই মৃত্যু নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলছে। কারণ এসব মালিকরা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় আছে। ভোটবিহীন সংসদে এরাই আধিপত্য বিস্তার করে আছে। তাই শুধু মালিককে নয়, কারখানা পরিদর্শকসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সব দফতরের প্রধান ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি সব কালকারখানায় উপযুক্ত কর্মপরিবেশ ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, অতীতে তাজরীন গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধ্বসে শ্রমিক হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হলেও পরে তারা মুক্ত হয়ে নিরাপদ জীবনযাপন করছে। গ্রেফতার মালিক হাসেমের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
কাজী রুহুল আমিন তার বক্তৃতায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের নামমাত্র ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান করে আইএলও’র সনদ অনুযায়ী তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় মোসলেহউদ্দিন বলেন, কারখানার নামে মৃত্যুফাঁদ বন্ধ না করা পর্যন্ত কমিউনিস্টরা তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। তিনি করোনার মধ্যেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানান।
‘শ্রমিক হত্যাকারী সেজান জুস কারখানার মালিকের বিচার চাই’, ‘শ্রমিক হত্যার বিচার চাই’, ‘কলকারখান প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কাজ কী?’, ‘কারখানায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন করো’, ‘নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর কারখানা চাই’, ‘কারখানা কেন মরণফাঁদ?’ ইত্যাদি দাবি লেখা ফেস্টুন বুকে ঝুলিয়ে সিপিবির নেতাকর্মীরা ঘণ্টাব্যাপী এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য লুনা নূর, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সদস্য শংকর আচার্য, মনিষা মজুমদার, সেকেন্দার হায়াত, ক্ষেতমজুর সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক অর্ণব সরকার, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফয়েজউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর