Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কারাগার থেকে বেরিয়ে বিয়ের পর স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে মাটিচাপা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুলাই ২০২১ ২০:০৯

ঢাকা: এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় জেলে যান শাহিন মুন্সি (২১)। তিন মাস হাজতবাসের পর শাহিন জামিনে বেরিয়ে ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীকে বিয়ে করেন। তাদের কোলজুড়ে একটি কন্যা সন্তানও আসে। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ ততই বাড়তে থাকে। দাম্পত্য জীবনে কলহের সৃষ্টি হতে থাকে। এক পর্যায়ে শাহিন স্ত্রী ও কন্যা সন্তানকে খুন করে বাড়ির পাশে মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এই চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদঘাটন করে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ৩ জুলাই বরগুনার পাথরঘাটায় লাশ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর ১২ জুলাই খুনি শাহিনকে চট্টগ্রামের বন্দর থানা এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে সিআইডি। গ্রেফতারের পর শাহিন তার স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর মাটিচাপা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে।

এসএসপি মুক্তা ধর বলেন, গত ৩০ জুন স্ত্রী সুমাইয়া পাথরঘাটার হাতেমপুর এলাকার পৈত্রিক বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন। পরে ২ জুলাই সুমাইয়ার ছোট বোন সুমাইয়ার খোঁজ জানতে চাইলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানায়, ওইদিন থেকে সুমাইয়াকে এবং আগের দিন থেকে তার কন্যাকে দেখা যায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়িতে তার ঘরের পাশেই এক স্থানে মাটি আলগা দেখা যায়। ৩ জুলাই সকালে সেই স্থানের মাটি খুঁড়লে সুমাইয়া ও তার সন্তানের মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিহত সুমাইয়ার বাবা রিপন বাদশা শাহিনকে প্রধান আসামি করে পাথরঘাটা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা গণমাধ্যমে এলে সিআইডির একটি বিশেষ দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধান আসামি শাহিন মুন্সিকে গ্রেফতার করা হয়। শাহিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১ জুলাই সন্ধ্যা থেকে সুমাইয়ার সঙ্গে তার স্বামীর প্রচণ্ড বাগবিতণ্ডা হয়। এর মধ্যে সুমাইয়া ঘর থেকে বের হলে শাহিনও তার পেছন পেছন বের হন। ঘরের পেছনে মাছ ধরার বর্শি রাখা ছিল। সুমাইয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই বর্শির লাইলনের সুতা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন শাহিন। এরপর শাহিন ঘরে ফিরলে তার ৯ মাস বয়সী শিশু সন্তান প্রচণ্ড কান্নাকাটি শুরু করলে তাকেও বাড়ির পাশের খালে নিয়ে চুবানো হয়। পরে ডোবার পাশেই কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যান শাহিন।

বিজ্ঞাপন

মুক্তা ধর বলেন, শাহিন স্ত্রী-সন্তানকে মাটিচাপা দিয়ে প্রথমে খুলনা পালিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে আত্মগোপনের জন্য চট্টগ্রাম গিয়ে শুধুমাত্র থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে একটি গ্যারেজে চাকরি নেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি-না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

গত বছরের ১৪ জুলাই সুমাইয়াকে ধর্ষণের অভিযোগে শাহিন মুন্সির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় তিন মাস জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে সুমাইয়াকেই বিয়ে করেন শাহিন মুন্সি।

এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার শাহিন জানিয়েছেন তার স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। তবে তাদের দাম্পত্য জীবন ভালো যাচ্ছিল না।

আগের ধর্ষণ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তা ধর বলেন, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। সুমাইয়াকে বিয়ে করার শর্তে শাহিনের জামিন হয়েছিল কি-না সে সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তবে শাহিনের জামিনের বিষয়ে বাদীপক্ষের কোনো আপত্তি ছিল না।

সারাবাংলা/ইউজে/এসএসএ

টপ নিউজ স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর