Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুলাই ২০২১ ২১:৩০

ঢাকা: কোনো শিল্প কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ (কমপ্লায়েন্স) না থাকলে ভবিষ্যতে দেশের বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের মতো দেশেই বিশেষ তদারকি প্রতিষ্ঠান গঠন করে সব কারখানাকে কমপ্লায়েন্স করা হবে। কমপ্লায়েন্স হওয়ার ক্ষেত্রে কারখানাগুলোকে সরকার দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন করবে। ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) চামড়া শিল্প নিয়ে এক অনলাইন আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এসব কথা বলেন বলেন। ‘রিভাইভিং দ্যা লেদার সেক্টর ইন দ্যা আফটারম্যাথ অব কোভিড-১৯’ বিষয়ক আলোচনা সভাটি আয়োজন করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), দ্যা এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)।

বিজ্ঞাপন

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তিনটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক ও র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউছুফ।

আলোচনায় সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের শিল্প কারখানার বড় সমস্যা কমপ্লায়েন্স। তাজরীন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতাদের চাপে তৈরি পোশাক শিল্পে কমপ্লায়েন্স হয়েছে। ব্র্যান্ডগুলোও স্বীকার করছে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা অধিকাংশক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স। তবে বড় সমস্যা স্থানীয় বাজারের জন্য যারা পণ্য উৎপাদন করেন তাদের। সর্বশেষ সেজান জুস কারখানায় আগুনের ঘটনা তার প্রমাণ। সব আন্তর্জাতিক পত্রিকায় এর শিরোনাম হয়েছে। যা আমাদের জন্য নেতিবাচক।’

অনুষ্ঠানে ড. আব্দুর রাজ্জাক তার প্রবন্ধে বলেন, ‘করোনায় এই সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য ১০ শতাংশ কমলেও চামড়াজাত পণ্যের বাণিজ্য কমেছে ২২ শতাংশ। অর্থাৎ চামড়াজাত পণ্য খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অন্যদিকে বৈশ্বিকভাবেই নন লেদার পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। পাশাপাশি কাঁচামালের দামও বাড়ছে। ফলে চামড়া শিল্পের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জের কারণে চীন থেকে বড় বড় ব্র্যান্ডের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা দারুন।’

আবু ইউসুফ বলেন, ‘চামড়াজাত পণ্যের তিনটি আইটেমে (লেদার, লেদারগুডস ও ফুটওয়্যার) গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এর জন্য সবস্তরে কমপ্লায়েন্স হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। পশু পালন, পশু জবাই, কাঁচা চামড়া প্রস্তুতকরণ ও ট্যানারি কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’

আরেক প্রবন্ধে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘গত বছর চামড়াজাত পণ্যে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ২০১৯ সালের তুলনায় এটি ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। তবে বৈশ্বিক বাজারে বিপুল চাহিদা রয়েছে। বিশ্বে প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ডলারের জুতা বিক্রি হয়। এর চাহিদা কমবে না। ব্র্যান্ডগুলো এখনও টেকসই লেদার চায়। তবে লজিস্টিক ও শিপিং ব্যয় বৃদ্ধি আমাদের চামড়া শিল্পের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।’

মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘গত বছর যে প্রবৃদ্ধি চামড়া শিল্প দেখেছে তা টেকসই করতে হবে। এজন্য একটা মহাপরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। কমপ্লায়েন্স ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না- এটা নিশ্চিত করতে হবে।’

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমাদের অনেক কাঁচামাল রয়েছে। তারপরও চামড়া শিল্প কেন পিছিয়ে, সেই কারণটা বের করতে হবে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি ও শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের চুক্তির রয়েছে। ওষুধ শিল্পসহ কয়েকটি খাতে বিদ্যমান সুবিধা ২০২৬ সালের পরও যেন অব্যাহত থাকে সে আলোচনা চলছে।’

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচাক ড. মিজানুর রহমান, ডিটিআইইডব্লিউটিপিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম জাহিদ হাসান ও ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব জিনাত আরা প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আলোচনায় চামড়া শিল্পখাতের উদ্যোক্তা, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার নীতি-নির্ধারক, শ্রমিক প্রতিনিধি, দাতা সংস্থা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

কারাখানা নিরাপদ কর্মপরিবেশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর