সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী
১৪ জুলাই ২০২১ ০৯:১৬
ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী বুধবার (১৪ জুলাই)। ২০১৯ সালের এইদিনে নানান রোগে আক্রান্ত রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
করোনা সংক্রমণের মুখে সাবেক এই স্বৈরশাসকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তেমন কোনো উদ্যোগ-আয়োজন নেই তার দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের কিংবা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু এ নিয়ে কোনো উদ্যোগই নেননি। তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তবে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর নেতা আবু হোসেন বাবলা ও লিয়াকত হোসেন খোকা ব্যক্তিগতভাবে এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবু হোসেন বাবলা ও লিয়াকত হোসেন খোকা ঢাকা মহানগরে নিজেদের উদ্যোগে করোনায় কর্মহীন ও সুবিধাবঞ্চিত ১০ হাজার মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করবেন।
বাবলার প্রেস অ্যান্ড পলিটিকাল সেক্রেটারি সাংবাদিক সুজন দে এ তথ্য নিশ্চিত করে সারাবাংলাকে জানান, এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে তিনি বিজয়নগরের কেন্দ্রীয় কর্যালয়ের সামনে দুইটি গরু জবাই করে প্রায় চার হাজার মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করবেন। বেলা ১১টায় এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
এদিকে, জাতীয় পার্টি রংপুর শাখা সকাল ছয়টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে। সেখানে সকাল ১০টায় এরশাদের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। ১১টায় রয়েছে আলোচনা সভা। এছাড়া সীমিত পরিসরে রংপুরের বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানায় মিলাদ মাহফিল ও খাবার বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ইয়াসির।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতায় আসেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। এরমধ্যেই প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। দুর্নীতি মামলায় বিএনপি সরকারের আমলে খাটেন জেল। জেলে থেকেই রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ। তার বাবা ছিলেন আদালতের পেশকার। বাবার চাকরির জন্য তার পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন তিনি। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেন এরশাদ।
১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে এরশাদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৩ সালে জেনারেল এরশাদ পাকিস্তান থেকে ফিরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনীপ্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সেনাপ্রধান এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন। তার পূর্বসূরি জিয়াউর রহমানের পথ ধরে ক্ষমতায় থেকেই গঠন করেন তার রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে দেশ শাসন করেন। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানের কারণে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
১৯৯১ সালে জেনারেল এরশাদ গ্রেফতার হন। কারাগারে থেকেই অংশ নেন ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত হন। তবে ক্ষমতা দখল ও জেনারেল মঞ্জুর হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে থাকা আরও বেশ কিছু মামলার নিষ্পত্তি হয়নি দীর্ঘদিনেও। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে তার দল মোট ৩৫টি আসনে জয়লাভ করে। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের আমলে তিনি জামিনে মুক্ত হন। ২০০০ সালে তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে মূল ধারার চেয়ারম্যান হন তিনি। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। এরপর তিনি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ হন।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও রংপুর-৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। চলতি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এএম