Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চলছে বেসিস নির্বাচন, বানচাল চেষ্টায় ৭ চিঠির একই ভাষা!


৩১ মার্চ ২০১৮ ১২:০৯

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: ভোট বানচালের সকল চেষ্টা ও ‘ষড়যন্ত্র’ পাশ কাটিয়ে বেসিসের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের প্রধানতম সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস-বেসিস’র দুই বছর মেয়াদে নির্বাহী কমিটি নির্বাচনে শনিবার (৩১ মার্চ) সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারওয়ান বাজারের বিডিবিএল ভবনের পাহারায় রাখা হয়েছে র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যদের।

সকাল থেকেই ভোটাররা এসে ভোট দিচ্ছেন। তবে কেন্দ্রের শোনা যাচ্ছে কিছু আলোচনা- সমালোচনা। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের কিছু খবর নিয়েই কথাবার্তা চলছে।

সবার মুখে এক কথা, নির্বাচন ঘিরে বেসিস এ বছর যতটা সমালোচনায় পড়েছে তেমনটা অতীতে আর কখনোই ঘটেনি।

আজ নির্বাচন চলছে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ডিবিবিএল ভবনে।

সকালে ভোট দিতে গিয়ে একাধিক বেসিস সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ভোটের দিন এসে এখন আর অতীত নিয়ে আলোচনা নয়, সকলেই চান যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সামনে আসুক। বেসিসে সঠিক নেতৃত্ব নিশ্চিত করা গেলে এ ধরণের ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করা সহজ হবে বলে মনে করেন তারা।

কেমন চলছে ভোট

এদিকে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভোট কেন্দ্রে মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক র‍্যাব ও পুলিশ সদস্য।  ভোটকেন্দ্রের বাইরে টহল দিচ্ছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বেসিসের নির্বাচন বোর্ডটি তিন সদস্য বিশিষ্ট। এবারের নির্বাচন বোর্ডের প্রধান বেসিসের সাবেক সভাপতি এস এম কামাল। আর নির্বাচন প্যানেলে তিন সদস্যের আপিল বোর্ড রয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন পরিচালনায় বেসিসের ২০ সদস্য যুক্ত রয়েছেন। ২০১৮-২০ সেশনের নির্বাচনে টিম হরাইজন, টিম দুর্জয়, উইন্ড অব চেঞ্জ নামে তিনটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

বিজ্ঞাপন

বেসিস নির্বাচনে বর্তমানে প্রার্থী ৩১ জন, ৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা থাকলেও ৯ জন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিল।

৯ জন করে দুই প্যানেলে ১৮ জন উইন্ড অব চেঞ্জ অর্থাৎ লুনা সামসুদ্দোহার প্যানেলে অ্যাসোসিয়েট প্রার্থী নেই, এই প্যানেলে প্রার্থী ৮ জন, ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী টিম

টিম হরাইজন: টিম হরাইজন নামে প্যানেলটি নতুন-পুরাতনের সমন্বয়ে গঠিত বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। টিমটিতে বর্তমান বোর্ড থেকে যেমন সদস্যরা এসেছেন তেমনি এসেছেন একদম নতুনরাও। সদস্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ৩:৩:৩ পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে।

টিম হরাইজন প্যানেলে সৈয়দ আলমাস কবীরের সঙ্গে রয়েছেন ইউওয়াই সিস্টেমস লিমিটেডের চেয়ারপারসন ও সিইও ফারহানা এ রহমান, বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের ডিরেক্টর শোয়েব আহমেদ মাসুদ, সফট পার্কের প্রধান নির্বাহী দেলোয়ার হোসেন ফারুক, জানালা বাংলাদেশ লিমিটেডের এমডি তানজিদ সিদ্দিক স্পন্দন, স্পেক্ট্রাম সফটওয়্যার অ্যান্ড কনসালটিং লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার মুশফিকুর রহমান, ক্রসওয়েস আইটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ফাহিম তানভীর আহমেদ, শুটিং স্টার লিমিটেডের এমডি দিদারুল আলম এবং ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাশাদ কবির।

উইন্ড অব চেঞ্জ: প্যানেলটির স্লোগান ‘নতুন উদ্যমে, নবরূপে’। এর নেতৃত্ব রয়েছে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা। এরই মধ্যে বেসিস নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে তিনি ব্যাংকটিকে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

উইন্ড অব চেঞ্জ’ প্যানেলে লুনা শামসুদ্দোহার সঙ্গে রয়েছেন ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, ডিভাইন আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ফকরুল হাসান, এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড সিইও আবুল দাউদ খান, স্টার কম্পিউটার সিস্টেম লিমিটেডের ডিরেক্টর ও সিওও রেজওয়ানা খান, ইনোভেশন ইনফর্মেশন সিস্টেম লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ সানোয়ারুল ইসলাম, রাইট ব্রেইন সল্যুশন লিমিটেডের সিইও নূর মাহমুদ খান এবং এআর কমিউনিকেশনস প্রধান নির্বাহী এম আসিফ রহমান।

টিম দুর্জয় : গত ১৪ মার্চ ‘উন্নয়নের ধারায় ঐক্যবদ্ধ’ স্লোগানে ‘টিম বিজয়’ নামে প্যানেল ঘোষণা করেন মোস্তফা রফিকুল ইসলাম ডিউক (ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক)। পরে গত ১৫ মার্চ টিম বিজয় নাম পাল্টে টিম দুর্জয় ঘোষণা করে তারা।

টিম দুর্জয় প্যানেলে আরও রয়েছেন- অ্যাটম এপি লিমিটেড ম্যানেজিং ডিরেক্টর এমকেএম আহমেদুল ইসলাম বাবু, এলিয়েন টেকনোলজি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ, সল্যুশন নাইন লিমিটেডের এমডি শহিবুর রহমান খান, স্টার হোস্ট আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী জাহিদুল আলম, স্পিনফ স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা সিইও এএসএম আসাদুজ্জামান, চালডাল লিমিটেড প্রধান অপারেশন অফিসার (সিওও) জিয়া আশরাফ, রেইজ আইটি সল্যুশন লিমিটেডের এমডি কেএএ রাশেদুল মাজিদ এবং জামান আইটির সিইও জামান খান।

আলোচনা সমালোচনার নানা দিক

পুরো প্রক্রিয়াতে আইসিটি জগতের একটি স্বার্থান্বেষী অংশের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে এমনটাই ভেবে আসা হচ্ছিলো। যার সূত্র ধরে এবারের বেসিস নির্বাচনে নানা ধরনের অপতৎপরতা দেখা গেছে। যাতে এই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রও ছিলো। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। নির্বাচন যথা দিনে, যথা সময়েই শুরু হয়েছে। তবে নির্বাচন শুরুর একদিন আগেই বের হয়ে আসে সেই ষড়যন্ত্রকারীদের নাম। জানা গেছে বেসিসের সদস্য এমন ১১টি প্রতিষ্ঠান এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে ৭টি সংগঠন থেকে পাঠানো চিঠির স্ক্যানড কপি ঘুরপাক খাচ্ছে। যেগুলোর ভাষা এক। এক জায়গা থেকে ড্রাফট হয়ে বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠানের প্যাডে এগুলো পাঠানো হয়েছিলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে।

এরা হচ্ছেন-
রাসেল টি আহমেদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা; টিম ক্রিয়েটিভ
উত্তম কুমার পাল, পরিচালক; বেষ্ট বিজনেস বন্ড লি:
মো: কাউছার আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক; বিডি ক্রিয়েটিভ লি:
আ. ন. ম. হাবিবুল মোস্তফা, চেয়ারম্যান; ঘাসফুড লি:
এম এম জি ফয়সাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক; এফ এম টেক লি:
মাহমুদ হাসান, প্রোপাইটার; রেইনবো আইটি।
রকিবুল মিনা, প্রোপাইটার, মধুমতি টেক।

বেসিসের এবারের নির্বাচন ঘিরে আগে থেকেই যেসব ষড়যন্ত্র কিংবা অপতৎপরতা চলে আসছিলো তাতে রাসেল টি আহমেদ নামটি অনেকেরই মুখে মুখে ছিলো, তবে প্রকাশ্যে কেউ বলছিলেন না। এই চিঠিগুলোর মধ্যে একটি যখন পাওয়া গেলো সরাসরি তার স্বাক্ষরে পাঠানো সুতরাং তিনি নিজেই প্রকাশ্য করলেন তার নিজের অবস্থান। ধারণা করা হচ্ছে- ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালিয়েছেন। যার মূল কারণই হচ্ছে অতীতে তার কিছু অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা। যার জন্য আঙুল উঠেছে রাসেল টি আহমেদ ও তার সহযোগীদের ওপর। কেউ কেউ তাদের রাসেল টি আহমেদ গং বলতেও ছাড়ছেন না।

রাসেল টি আহমেদের বিরুদ্ধে বেসিসের অর্থ কেলেঙ্কারির সবশেষ যে অভিযোগটি প্রকাশ্য হয়েছে সেটি হচ্ছে অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ড কেলেঙ্কারি। এই কেলেঙ্কারিতে তার সঙ্গে অভিযুক্ত আরেকজন ছিলেন উত্তম কুমার পাল। যিনিও এবারের নির্বাচন বানচালে সচেষ্ট ছিলেন এবং ডিটিওকে যারা চিঠি পাঠিয়েছেন তাদের একজন।

এক অডিট রিপোর্টে সরাসরি টাকা লুটপাটের বিষয়টি সবার নজরে আসে। যার অন্যতম ছিলো ওই অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ড।

গত ৭ ডিসেম্বরে ঢাকায় আয়োজিত হয় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক ইভেন্ট অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ড। অনুষ্ঠানটি সফলভাবে আয়োজনের জন্য সরকারের আইসিটি ডিভিশন থেকে বেসিসকে ৩ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়।

আয়োজক কমিটির আহবায়ক ছিলেন রাসেল টি আহমেদ, উত্তম কুমার ও রাশিদুল হাসান। অভিযোগ করা হয়েছে, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সেবার আরও ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা বেসিস ফান্ড থেকে নেওয়া হয়েছিলো। যা সম্প্রতি বেসিস কার্যনির্বাহী কমিটির অডিটে ধরা পড়ে। অডিট কমিটি বিষয়টি নিয়ে রাসেল টি আহমেদ, উত্তম কুমার ও রাশিদুল হাসানের মুখোমুখি হলে তারা এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেন নি এমনটাই জানিয়েছেন বেসিসের দায়িত্বশীল সূত্র।

নতুন কমিটি এসে অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়গুলো সামনে আনবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়েও নির্বাচনে নেমেছেন কেউ কেউ।

এমতাবস্থায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন রাসেল টি আহমেদ ও তার অনুসারীরা। যাতে নিজ পক্ষের এবং যাদের ওপর প্রভাব খাটানো যাবে এমন প্যানেল কিংবা সদস্যরা বেসিস-এর নির্বাহী কমিটিতে আসেন যে জন্য শুরু থেকেই নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে একটি মহল। প্রকাশ্য না হওয়ার কারণে অনেকে বুঝতে পারলেও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছিলেন না, রাসেল টি আহমেদ গংএর কথা। নির্বাচনে একটি প্যানেলকে পেছন থেকে সহযোগিতা করার অভিযোগ এই গং’র বিরুদ্ধে রয়েছে। তবে তাতেও যখন দেখছিলেন শেষ রক্ষা হচ্ছে না, তখন প্রথমে ভোট ফর রাইট ক্যান্ডিডেট নামে একটি ক্যাম্পেইন সামনে আনা হয়। যা পরে জানা যায়, এর পেছনেও ছিলো রাসেল টি আহমেদ গং’র হাত। আর সবশেষ চেষ্টা হিসেবে নির্বাচনটি বানচালই করে দিতে চায় এই গং। সে পরিকল্পনাও শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় স্বয়ং নির্বাচন বোর্ডের প্রধান ও বেসিসের সাবেক একজন সভাপতির হস্তক্ষেপে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর