দক্ষিণ আফ্রিকায় জুমা সমর্থকদের দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭২
১৪ জুলাই ২০২১ ১১:৫১
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা জেলে যাওয়ার ঘটনায় দেশটিতে চলামান দাঙ্গা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে করে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭২ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দেশটিতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সারাদেশ বিভিন্ন শপিংমলে ছিনতাই ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর আলজাজিরা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের ২৭ বছর পরে গত সপ্তাহে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা গ্রেফতারের পর বৈষম্যসহ নানা কারণে এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
দেশটির নিরপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা চলমান দাঙ্গা ও ছিনতাই বন্ধ করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। যা সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার নিজ এলাকা কোয়াজুলু-নাটাল থেকে দেশের বৃহত্তম শহর জোহানেসবুর্গ এবং গৌতেং প্রদেশের আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা পুলিশ সার্ভিস (এসএপিএস) মঙ্গলবার গভীর রাতে জানায়, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৭২ জন নিহত হয়েছে। একইসঙ্গে গত কয়েক দিনের বিক্ষোভে লটুপাট ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ এক হাজার ২৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চলমান করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিধিনিষেধের ফলে দেশটিতে দারিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে। ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে দেশটিতে বেকাত্বের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, বেকারত্বের হার ৩২ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে ১৫ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ সাজার রায় দেন প্রধান বিচারপতি সিসি খামপেপে।
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সংঘটিত একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে জ্যাকব জুমার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে তদন্ত চলছে। এসব তদন্তে সহায়তা করতে জ্যাকব জুমাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক। তবে জ্যাকব জুমা মাত্র একবার আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার উপ-প্রধান বিচারপতি রে জনডো এসব অভিযোগের তদন্ত করছেন। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে হাজিরা না দেওয়ায় জ্যাকব জুমার বিরুদ্ধে দেশটির সাংবিধানিক আদালতে অবমাননার অভিযোগ আনেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারক সিসি খামপেপে তার রায়ে বলেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে গ্রেফতার করা ছাড়া আমার হাতে আর কোনো উপায় রইলো না। এটি আমরা করছি এই আশায় যে, আইনের শাসন ও বিচার প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী এমন একটি দ্ব্যর্থহীন বার্তা সমাজে ছড়িয়ে যাবে’।
রায় ঘোষণার পর পুলিশের হাতে ধরা দিতে এক সপ্তাহ সময় পান জ্যাকব জুমা। গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) আদালতের বেধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন জ্যাকব জুমা।
জুমা এর আগে বলেছিলেন, তিনি জেলে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু এই বয়সে মহামারির মধ্যে তাকে জেলে পাঠানোর মানে হলো তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা। তিনি আরও দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।
জেলে যাওয়ার দিন থেকেই সাবেক প্রেসিডেন্ট জুমার সমর্থকরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেছে। টানা ৫ দিনের সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪৫ জন। এতে দেশটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি সেনা মোতায়েন করেছে সরকার।
সারাবাংলা/এনএস