Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রিকশার চাকা ঘুরলে সংসার চলে, নয়তো উপোস!’

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুলাই ২০২১ ১৮:১০

ঢাকা: সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গত ২০ জুন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকদের বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একে তো চলছে ‘লকডাউন’, তার ওপর বেকারত্বের চাপে দুর্বিসহ হয়ে পড়ছে তাদের জীবন যাপন।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যাচ্ছে এসব রিকশা। তবে হঠাৎ শহরে ভেতরে ঢুকলেও পড়তে হচ্ছে পুলিশের জেরার মুখে। এমনকি রিকশা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

কথা হয় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক জুয়েলের (৬০) সাথে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী। আমার প্যারালাইসিস হয়েছে। আমার সংসারে সদস্য সংখ্যা ছয় জন। চার মেয়ে আমি ও আমার স্ত্রী। দুই মেয়ের বিয়ে দিতে পারলেও অর্থসংকটের জন্য বাকিদের এখনও বিয়ে দিতে পারিনি। আমিই পরিবারের একমাত্র আমি উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার রিকশার চাকা ঘুরলে এবং সেই রিকশা দিয়ে ইনকাম করতে পারলে সংসার চলে, নইতো উপোস থাকতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধের ঘোষণা করেছেন। বিকল্প কিছু না ভাবেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয়? এখন রিকশা নিয়ে বের হতে গেলেও পুলিশে আটকিয়ে দেয়, মারতে যায়, রিকশা কেড়েও নেয়। আমি এখন কীভাবে সংসার চালাব? কীভাবে আমার মেয়েদের মুখে ভাত তুলে দেবো। তার উপরে চলছে লকডাউন। লকডাউনে বের হলেও, আর আগের মতো ভাড়া হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘না খেয়ে মরার চেয়ে বিষ খেয়ে মরা অনেক ভালো। মান সম্মনের ভয়ে তো ভিক্ষায়ও করতে পারব না। আবার অন্য কাজ করে খাব সেই সামর্থ্যও আমার নেই। রিকশার চাকা না ঘুরলে, সংসারের চাকাও ঘোরে না। সরকার গাড়ি চালাতে না দিলে বিকল্প ব্যবস্থা করে দিক।’

ব্যাটারিচালিত আরেক রিকশাচালক ফারুক (৩০)। তিনিও প্রতিবন্ধী। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে রোড অ্যাক্সিডেন্টে আমার বাম পা কাটা পড়ে। এরপর থেকে পঙ্গু হয়ে জীবন-যাবন করছি। সংসারে আমার ৮০ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা ও স্ত্রী, ছোট দুই ছেলে-মেয়েও রয়েছে। তাদের সমস্ত চাহিদা আমাকে পূরণ করতে হয়। আমাকে কোনো অনুদান দিতে হবে না, আমাকে রিকশা চালতে দিক। প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা ইনকাম হতো। এখন কীভাবে কাজ করে খাব? সংসার খরচ কীভাবে যোগাড় করব? যা টাকা ছিল লকডাউনের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেছে। আর কত ধার দেনা করে চলা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিবন্ধী ভাতা পাইনি। সরকার থেকে লকডাউনে কিছুই পাইনি। সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন- গাড়িটা চালাতে দেন, আমাদের বাঁচান। আমরা তো এদেশের নাগরিক, আমাদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। রিক্শা না চললে আমরা বাঁচব কীভাবে।’

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ফরহাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ শুনেছি লকডাউনে গরীব-অসহায় মানুষের জন্য সরকার অনুদান দিচ্ছে। কই আমাদের কাছে তো অনুদান আসে না। তারপরও আবার লকডাউনে রিকশা চালতে দেয় না। রিকশা নিয়ে বের হলে ভয়ে ভয়ে থাকি কখন পুলিশ তাড়া দেয়। এটাকে কি জীবন বলে? কিছু একটা বিকল্প না ভেবে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে দিচ্ছে। তাহলে আমরা কী করব, কোথায় যাব?’

সারাবাংলা/এআই/পিটিএম

উপোস চাকা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সংসার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর