মেগা প্রকল্পের চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো জরুরি: জি এম কাদের
১৫ জুলাই ২০২১ ১৭:২৩
ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ৬ লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট আমাদের। বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে দেশে। কিন্ত করোনায় কর্মহীন পরিবারগুলো মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের মোহাম্মদপুর জাকির হোসেন রোড মাঠে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুঃস্থদের মাঝে খাদ্যপণ্য বিতরণ উদ্বোধন শেষে এ কথা বলেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর-এর সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টুর অর্থায়নে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির ব্যবস্থাপনায় কয়েক হাজার মানুষকে মাসব্যাপী খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘এক বছর আগেই আমরা বলেছিলাম লকডাউন দেওয়ার আগে মানুষের খাবার, ওষুধ এবং জরুরি নিত্যপণ্য নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া কখনোই লকডাউন সফল হবে না। লকডাউন সফল হয়নি, করোনার সংক্রমণ বেড়েছে, বেড়েছে মৃত্যুর হারও।’
জি এম কাদের বলেন, ‘বাজেট তৈরি হয় দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। এ টাকার মালিক দেশের জনগণ। তাই সেখান থেকে প্রতি মাসে দরিদ্র পরিবার প্রতি অন্তত ১০ হাজার টাকা দিলে দেশের মানুষ বাঁচতে পারবে। লকডাউনও সফল হবে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো জরুরি।’
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় যখন ২৬ থেকে ২৮ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন, সেখানে শুধু ঘোষণা আসছে ৫ থেকে ১০ লাখ টিকা আসছে। সারাবিশ্ব যখন করোনার ভ্যাকসিন দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে তখনো আমরা জানি না কখন দেশের সবাই ভ্যাকসিন পাবেন। দেশের প্রতিটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। যেভাবে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, তাতে ৫ থেকে ৬ বছর লেগে যেতে পারে। আবার ১০ বছরও লেগে যেতে পারে। তাতে পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে যাবে। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আর মাস্ক ব্যবহার করেই করোনা মোকাবিলা সম্ভব হবে না। প্রতিদিন সরকারের পক্ষ থেকে করোনা ভ্যাকসিনের ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সরকারি আশ্বাসে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে সাধারণ মানুষ।’
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় আগে সরকারকে আমরা স্বাস্থ্যসেবা আরো উন্নত করতে বলেছি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতালেই ডাক্তার নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে বলেছিলাম। প্রতিটি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরিক্ষার যন্ত্রপাতি এবং অক্সিজেন সহায়তা নিশ্চিত করতে বলেছিলাম। এখন হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার উঠছে। সরকারের ব্যর্থতায় করোনা এখন গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসার অভাবে গ্রামের মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে, যার হিসেব নেই সরকারের কাছে। মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে পানি পড়া খেয়ে করোনা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করছে, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আর হতে পারে না।’
গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালেও আইসিইউ তৈরি করতে পরামর্শ দিয়েছিলাম সরকারকে। কিছুই করা হয়নি, সরকারি হাসপাতালে যে আইসিইউ আছে তার মধ্যে অনেকগুলোই অকেজো থাকে। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে রাজধানীতে বেশ কিছু আইসিইউ আছে যেগুলো অত্যান্ত ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নেয়া কখনোই সম্ভব নয়।’
এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়াম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘সুস্থ ও স্বাভাবিক নয় এমন এক শিশুর ঘোষণায় একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হতে পারে না। একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে আইন ও বিভিন্ন নীতিমালা রয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশান এরশাদ এর সাথে কথা না বলেই তাকে চেয়ারম্যান ঘোষণা, এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করা কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে তা বিবেচনা করা উচিত ছিলো। নিউজ প্রকাশ ও প্রচারের আগে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এর সঙ্গে অবশ্যই কথা বলা উচিত ছিলো গণমাধ্যমের।’
সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় পার্টি মহানগর উত্তর এর সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘প্রতিটি দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি আজীবন হতদরিদ্র মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ উপলব্ধি করছেন আজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বেঁচে থাকলে সাধারণ মানুষের মাঝে এত হাহাকার থাকত না। তাই সাধারণ মানুষ আগামীতে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়।’
সারাবাংলা/এইচএইচ/একে