Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যাত্রীদের লিঙ্গনিরপেক্ষ সম্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে লুফথানসা

রোকেয়া সরণি ডেস্ক
১৭ জুলাই ২০২১ ২২:৫৫

জার্মানির বিশ্বখ্যাত বিমান সংস্থা লুফথানসা গ্রুপ যাত্রীদের লিঙ্গনিরপেক্ষ ভাষা ব্যবহার করে অভ্যর্থনা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি সংস্থাটির এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সিএনএন‘র খবর।

এর আগে লুফথানসা গ্রুপের একাধিক এয়ারলাইন্স— লুফথানসা, ইউরোউইংস এবং ব্রাসেলস এয়ারলাইন্স— অন্যান্য এয়ারলাইন্সের মতোই যাত্রীদের ‘ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রলোক’ বাক্য ব্যবহার করে স্বাগত জানাতো। সম্প্রতি বিমান সংস্থাটি যাত্রীদের লিঙ্গনিরপেক্ষ শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করে সম্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক বিবৃতিতে বিমান সংস্থাটি জানিয়েছে, এবার থেকে তাদের বিমানগুলোতে ভ্রমণকারীদের ‘অতিথি’ হিসেবে উল্লেখ করা হবে, অথবা সবাইকে ‘শুভ সকাল’র মতো লিঙ্গনিরপেক্ষ অভ্যার্থনা বাক্য ব্যবহার করে স্বাগত জানানো হবে।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমাদের সংস্থা এবং কর্পোরেট সংস্কৃতির মৌলিক মূল্যবোধ হলো বৈচিত্র্য ও সাম্য। এখন থেকে আমরা আমাদের ভাষায়ও এই মনোভাবটি প্রকাশ করতে চাই, এবং দেখাতে চাই যে, বৈচিত্র্য কেবল একটি বাক্য নয়, বরং এটি একটি দৈনন্দিন বাস্তবতা।’

শুধুমাত্র বিমানে যাত্রীদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে নয়, এর বাইরে দাফতরিক কাজেও লিঙ্গনিরপেক্ষ ভাষার উপর জোর দিচ্ছে লুফথানসা। সংস্থাটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন মাসের শুরু থেকেই সংস্থার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে লিঙ্গনিরপেক্ষ ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সমস্ত চুক্তি এবং নথিপত্রে ভাষাগত পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে লুফথানসার শীর্ষ এক কর্মকর্তা সিএনএন’কে জানান, সংস্থাটি অতিথিদের আলাদাভাবে ‘প্রিয় স্যার বা ম্যাডাম’ হিসেবে সম্বোধন করা নিষিদ্ধ করেনি। বিমানে কেবিন ক্রুরা পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজন হলে এসব সম্বোধন ব্যবহার করতে পারবেন— তবে তা করা যাবে যখন কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে আলাদাভাবে সম্বোধন করা হবে তখন। কিন্তু বিমানের সকল যাত্রীকে একসঙ্গে সম্বোধনের ক্ষেত্রে লিঙ্গনিরপেক্ষ ভাষা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা জারি করেছে লুফথানসা।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, লিঙ্গনিরপেক্ষ শব্দ দেশ ও অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। ইংরেজি ভাষায় অধিকাংশ বিশেষ্য লিঙ্গনিরপেক্ষ। কিন্তু ফ্রেঞ্চ, জার্মান, স্পেনিশ, ইতালিয়ানসহ অনেক ভাষাতেই সম্বোধনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দগুলো লিঙ্গনিরপেক্ষ নয়। এক্ষেত্রেও কেবিন ক্রুসহ বাকিদের পরিস্থিতি অনুযায়ী যাত্রীদের আলাদা করে সম্বোধন করতে হবে।

লিঙ্গ পরিবর্তন করে আলোড়ন সৃষ্টি করা এক ব্রিটিশ পাইলট এয়ারলাইনগুলোর এ ধরনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সিএনএন। ব্রিটিশ পাইলট সিদ্ধান্তটির ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বলেন, ঐতিহাসিকভাবে এভিয়েশন সেক্টর পুরুষ নিয়ন্ত্রিত। এখানে জেন্ডারসমতা কায়েম হওয়া সময়সাপেক্ষ। এমনকি অনেক এয়ারলাইন্সের পাইলট ও কেবিন ক্রুদের পোশাকও আলাদা। তাই লিঙ্গনিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ছোট মনে হলেও আসলে তা বেশ ইতিবাচক।

তবে যাত্রীদের লিঙ্গনিরপেক্ষ সম্বোধনে লুফথানসা অবশ্য প্রথম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের অন্যান্য এয়ারলাইন্সও যাত্রীদের লিঙ্গনিরপেক্ষ ভাষা ব্যবহার করে সম্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছর জাপানি বিমান সংস্থা জাল, এবং ইউরোপীয় ইজিজেট এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৯ সালে কানাডার ফ্ল্যাগশিপ এয়ারলাইন এয়ার কানাডাও এমন পদক্ষেপ নেয়।

এছাড়া চলতি বছরের জুনে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ড্রোন ইন্ডাস্ট্রিতে এভিয়েশনে ব্যবহৃত নানা লিঙ্গবৈষম্যমূলক শব্দ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। যেমন, ‘এয়ারম্যান’ ও ‘আনম্যানন্ড’ শব্দের পরিবর্তে ‘এভিয়েটর’ এবং ‘আনক্রিউড’ শব্দ প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/আরএফ/আইই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর