সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল— এই মনোভাব আর নেই: প্রধানমন্ত্রী
১৮ জুলাই ২০২১ ১৪:১২
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি অফিসারদের ভেতরে আগে যেমন ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ একটা মনোভাব ছিল এখন সেটি নেই। প্রত্যেকে নিজের কাজটাকে নিজের বলে দায়িত্বটা গ্রহণ করছেন এবং বাস্তবায়ন করবার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এটিই হচ্ছে সব থেকে বড় কাজ।
রোববার (১৮ জুলাই) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয় বা বিভাগসমূহের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং ‘এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠান-২০২১’- অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরষ্কার ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন এবং এপিএ প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী সরকার কর্মকর্তা-কর্মকর্তাচারীদের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। কারণ কাজের বেলায় প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে নিজেদের ভেতরে একটি উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। সবচেয়ে ভালো লাগে, আমি যে জিনিসটা এখন লক্ষ করি, তা হলো— আগে যেমন ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ একটা মনোভাব ছিল, সেটি নেই। আজকে প্রত্যেকে নিজের কাজটাকে নিজের বলে গ্রহণ করছেন এবং আপনার দায়িত্বটা আপনি নিজে গ্রহণ করছেন। সেটা বাস্তবায়ন করবার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আসলে এটাই হচ্ছে সবথেকে বড় কাজ মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার নির্দেশনাগুলো আপনারা যদি একবার দেখেন তাহলে কিন্তু দেখবেন তিনি কিন্তু প্রত্যেকটা জিনিস বলে গেছে। আপনাদের দায়িত্ব জনগণের সেবা করা। কারণ আমার দেশের কৃষক, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করে। সেই ফসল খেয়েই তো আমাদের জীবন বাঁচে। আমার দেশের শ্রমিক তারা শ্রম দিয়ে ঘাম দিয়ে যে উৎপাদন করে সেটাই তো আমাদের আর্থিক সঙ্গতি। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের অবদানটা আমরা ছোট করে দেখতে পারি না, কোনো কাজেই ছোট না।’
তাদের কল্যাণে কাজ করা। তাদের জীবনমান উন্নত করা। আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা দেয়া, যান্ত্রিকীকরণ করা কৃষিকে বা শ্রমের মূল্য দেয়া;এটা তো আমাদের দায়িত্ব এবং তাদেরকে সেইভাবে সম্মান দেয়া, তাদের জন্য কাজ করা, সেটাই তো বড় শিক্ষা এবং সেটাই সবার বড় দায়িত্ব বলেও বরাবরের মতো স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি নিজের পরিবারের শিক্ষার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমাদেরকে শিখিয়েছে রিকশাওয়ালাকে আমরা কখনো তুমি বলতে পারতাম না। আমাদের আপনি বলতে হবে। বাড়ির ড্রাইভারকে ড্রাইভার সাহেব বলে ডাকতে হবে। কাজের লোককে আমরা কখনো চাকর-বাকর বলে এই শব্দ আমরা উচ্চারণ করতে পারতাম না এবং এটি নিষিদ্ধ ছিল। বয়স্ক হলে তাদের আপনি বলে এবং তাদের একটা আত্মীয়তা সম্মানজনক সম্মোধন আমাদের করতে হতো। এটিই বাবা-মা আমাদের শিখিয়েছেন।’
কাজেই যে কোনো কাজকে নিজের করে নেওয়া, নিজের মতো চিন্তা করা, অর্থ্যাৎ ওন করা। বিশেষ করে ২০০৯ এ সরকার গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত আমি যেটা সর্বক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি আমাদের যারা প্রশাসনে আছেন, আইনশৃঙ্খলায় আছেন অথবা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে আছেন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রত্যেক ক্ষেত্রে যারা স্ব স্ব কর্মরত, প্রত্যেকের ভিতর কিন্তু এই পরিবর্তনটা এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে রেখে গিয়েছেন ১৯৭৫ সালে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হতে পেরেছি। আজকে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ একটা সম্মানজনক অবস্থানে এসেছে। যে বাংলাদেশকে আগে আমরা বাইরে গেলে শুনতাম বাংলাদেশকে শুনলেই বলতো দুর্ভিক্ষের দেশ, ঘূর্ণিঝড়ের দেশ, জলোচ্ছ্বাসের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ এখন আর সেটা বলে না কিন্তু। এখন আমরা ভিক্ষা চাওয়ার দেশ না। কারণ জাতির পিতা বলেছেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যেন আমাদের অবহেলা করতে না পারে। যেটুকু সম্পদ আছে। সেটা দিয়েই আমরা এগিয়ে যাব। আমরা সেই এগিয়ে যাচ্ছি এবং এই এগিয়ে যাওয়ার চলার পথে আপনারাই হচ্ছেন সবথেকে বড় চালক। আপনাদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে বলে কাজগুলো আমরা করে যেতে পারি। এ জন্য সব মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানাই।’
করোনার এই পরিস্থিতিতে সকলে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি। আমাদের ভ্যাকসিন আসছে এবং আমাদের দেশের প্রত্যেক মানুষ যাদের এই ভ্যাকসিনটা গ্রহণ করার তাদের সবাই যেন এটি নিতে পারে। তার জন্য যত দরকার আমরা ক্রয় করব। কোন মানুষ যেন ভ্যাকসিন থেকে বাদ না পড়েন সেইভাবেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাইছি, দেশের কোনো মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমাদের মানুষগুলো গ্রামের বাড়িতে ছুটতে পছন্দ করে, মাস্ক পড়তে চায় না। কিন্তু যারা যেখানে দায়িত্বরত আছেন, আপনারা দায়িত্ব পালনের সময় মানুষকে বোঝাবেন যেন সবাই এই মাস্কটা পরে। আর যেন সবাই সাবধানে থাকে।’
মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই লগ্নে প্রশাসনের সব স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।—
সারাবাংলা/এনআর/একে