ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতু, দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে
১৯ জুলাই ২০২১ ০৩:২০
সিরাজগঞ্জ: জেলার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে ক্ষতিগ্রস্ত নলকা সেতুর কারণে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কেও ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। এছাড়া কড্ডায় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলমান থাকায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মহাসড়কে রয়েছে যানবাহনের ধীরগতি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীরা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে মহাসড়কে।
এছাড়া কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পর থেকেই সরেজমিনে মহাসড়কজুড়ে এই চিত্র দেখা যায়। দিন ছাড়াও রাতের বেলাতেও তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে মহাসড়কটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের নলকা সেতুর বিভিন্ন জায়গায় পিচ ও পাথর উঠে গেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুতে মাঝে মধ্যে সংস্কার করলেও বৃষ্টিপাতের কারণে সেতুটির এক্সপানশন জয়েন্টগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। ফলে ধীরগতিতে চলাচল করছে যানবাহন।
অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের মুলিবাড়িতে ডিভাইডার ও কড্ডায় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলমান থাকায় এই দু’টি জায়গায়ও যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। ফলে এই মহাসড়কে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে সিরাজগঞ্জ রোড গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মহাসড়কে ভোগান্তিতে পড়েছে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। বিশেষ করে রাতে যানবাহনের চাপ বাড়লে তীব্র হচ্ছে যানজট যা দিনের বেলায়ও অব্যাহত থাকছে।
ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী ট্রাকচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘নলকা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে গাড়ি। এতে মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়ে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে।’
ঢাকা-সিরাজগঞ্জ রুটের এসআই এন্টার প্রাইজের চালক আজাদ শেখ বলেন, ‘বর্তমানে মহাসড়কের যে অবস্থা তাতে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতু ভোগান্তির মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (টোল অংশ) আহসান মাসুদ বাপ্পি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৭ থেকে ১৮ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের ৩ দিন আগে ও ৩ দিন পরে এই মহাসড়ক দিয়ে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় দ্বিগুণ অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। গত ঈদুল ফিতরের আগে (গত ১৩ মে) একদিনে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৫২ হাজার যানবাহন চলাচল করেছে।’
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহেল বাকি জানান, নলকা সেতুটি সড়ক বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। সেতুর বিভিন্ন স্থানে পিচ ও পাথর উঠে গেছে। এ কারণে সেতুতে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। যানজট নিরসনে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় থেকে নলকা সেতু পর্যন্ত সেতু থানার নিয়ন্ত্রণে। এই সংযোগ মহাসড়কের মুলিবাড়িতে ডিভাইডার ও কড্ডা এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ কারণে অধিকাংশ সময় ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করায় মাঝে মধ্যে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মূলত নির্মাণ কাজের জন্য সাময়িক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে মুলিবাড়ি ও কড্ডায় আলাদা ডাইভারশন তৈরি করা হচ্ছে। বিকল্প এই ডাইভারশন ব্যবহার শুরু হলে আলাদা আলাদা লেনে যানবাহন চলাচল করবে।’
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম পিকে বলেন, ‘নলকা সেতুটি অনেক দিনের পুরাতন হওয়ায় প্রায় সময়ই সংস্কার কাজ করা হয়, যাতে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারে। গত কয়েক দিনে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সেতুর পিচ ঢালাই উঠে গেছে। এছাড়া পুরনো ডিজাইনের এই সেতুটির এক্সপানশন জয়েন্টের দূরত্বও একটু বেশি। যার ফলে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।’ সেতুর বিভিন্ন স্থানে আরও সংস্কার কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/এমও
ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক নলকা সেতু বঙ্গবন্ধু সেতু যানবাহনের ধীরগতি