কমতে কমতে আপিল বিভাগে বিচারপতি এখন ৫ জন
১৯ জুলাই ২০২১ ১৩:১০
ঢাকা: দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একসময় ১১ জন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ জনে। এ ছাড়া বছরের শেষে (৩০ ডিসেম্বর) অবসরে যাবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তখন আপিল বিভাগে বিচারপতি থাকবেন মাত্র চারজন।
বর্তমানে আপিল বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন পাঁচজন বিচারপতি। তারা হলেন— প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এর আগে, গত ১৫ জুলাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীকে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আগামী ২৮ জুলাই তার অবসরের দিন। কিন্তু সে সময় অবকাশের ছুটি থাকায় ১৫ জুলাই (অবকাশ শুরুর আগের দিন) তাকে বিদায় জানানো হয়।
সংবিধানের ৯৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর। বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী অবসরের পর আপিল বিভাগে যারা থাকছেন তাদের মধ্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ২০২৩ সালের ৩০ জুন এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যাবেন।
জানা যায়, আপিল বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতি না থাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার বিচার কাজ দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। পরে মামলাটি নিষ্পত্তি করাকে সামনে রেখে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই আপিল বিভাগে চারজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন বিচারপতির সংখ্যা সাত থেকে বেড়ে ১১ জন হয়। তবে একইবছরের শেষে দিকে এসে আবার আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা কমতে শুরু করে।
এরপর দুই বছরের মধ্যে ছয়জন বিচারপতি অবসরে যান। ২০১০ সালে এসে আবার বিচারপতির সংখ্যা কমে হয় পাঁচজন। আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা বাড়াতে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চার জন এবং ১৬ মে দুই বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। অল্প সময়ের মধ্য অবসরে যাওয়ায় বিচারপতির সংখ্যা কমে হয় ১০ জন। পরে ২০১১ সালে প্রধান বিচারপতিসহ তিন জন অবসরে যাওয়ায় আপিল বিভাগের বিচাপতির সংখ্যা কমে হয় সাত। ২০১২ সালে অবসরে যান আরও একজন।
২০১৩ সালে আপিল বিভাগে আরও চারজনকে নিয়োগ দিলে বিচারপতির সংখ্যা আবার বেড়ে হয় ১০ জন। এরপর ২০১৪ সালের মধ্যে আরও দু’জন অবসরে যান। পরের বছর ২০১৫ সালে প্রধান বিচারপতিসহ আরও দু’জন অবসরে যাওয়ায় আপিল বিভাগে বিচারপতি হয় ৬ জন। পরে ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিন জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা বেড়ে হয় ৯ জন।
এরপর এই ৯ জনের মধ্যে দেশের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ২০১৭ সালের ৭ জুলাই অবসরে যান। একইবছর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১০ নভেম্বর এবং ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা পদত্যাগ করেন। ফলে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা কমে হয় চারজন। পরে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর তিনজন বিচারপতি নিয়োগ দিলে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়ায় সাত জনে। এ অবস্থায় ২০২০ সালের ১৪ মার্চ দেশের দ্বিতীয় নারী বিচারপতি জিনাত আরা অবসরে যাওয়ায় বিচারপতির সংখ্যা হয় ছয়জন।
গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আপিল বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে নিয়োগের দুই সপ্তাহ পর বিচারপতি তারিক উল হাকিম অবসরে যান। তখন বিচারপতির সংখ্যা কমে হয় আট জন। এ অবস্থায় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসরে যান বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। তখন বিচারপতির সংখ্যা আট থেকে কমে হয় ছয় জন। এরপর চলতি মাসের ২৮ জুলাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী অবসরে যাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে পাঁচ জনে।
যেভাবে সুপ্রিম কোর্টে (হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ) বিচারপতি নিয়োগ হয়
সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করা হয়ে থাকে। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দান করিবেন।’
সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী, সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদের বিধানের পরও রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিভাগের বিচারক সংখ্যা সাময়িকভাবে বাড়ানো উচিত মনে হলে তিনি যোগ্যতাসম্পন্ন এক বা একাধিক ব্যক্তিকে অনধিক দুই বৎসরের জন্য অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত করিতে পারেন। কিংবা তিনি উপযুক্ত বিবেচনা করিলে হাইকোর্ট বিভাগের কোনো বিচারককে যেকোন অস্থায়ী মেয়াদের জন্য আপিল বিভাগে নিযুক্ত করতে পারেন।
তবে শর্ত থাকে যে, অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া (সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের অধীন বিচারকরূপে নিযুক্ত) কিংবা বর্তমান অনুচ্ছেদের অধীন আরও এক মেয়াদের জন্য অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বর্তমান অনুচ্ছেদের কোনো কিছুতে বিচার্য হবেন না।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও