কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ডিএনসিসি’র ১১টি পদক্ষেপ
২০ জুলাই ২০২১ ১৬:২৫
ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নাগরিকদের ভোগান্তি নিরসনে ১১টি পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। নির্বিঘ্নে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে এবার সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি।
কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় ১১ হাজার ৫০৮ জন কর্মী নিয়োজিত থাকবে। মঙ্গলবার (২০ জুলাই) ডিএনসিসি’র মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
এ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, এবার ৩০৭টি জায়গায় পশু কোরবানি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাসিন্দারা যাতে যত্রতত্র বর্জ্য না ফেলেন, এজন্য সাড়ে ছয় লাখ ব্যাগ বিতরণ করা হবে।
এছাড়াও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্গন্ধ প্রতিরোধে প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হবে বলেও জানিয়েছেন আতিকুল ইসলাম।
আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, এবার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১১টি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি নাগরিকদের সহায়তায় খুব দ্রুত আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জকে জয় করতে পারব।
ডিএনসিসি’র ১১টি পদক্ষেপ হলো:
১. কোভিড-১৯ বিবেচনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আওতাধীন ৯টি পশুর হাট নির্ধারণ।
২. ডিজিটাল পশুর হাটের মাধ্যমে জনগণ বাসায় বসেই কোরবানির পশু পছন্দ করতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল হাটের ব্যবস্থাপনায় ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক পশু জবাই এবং বাড়ি বাড়িতে মাংস পৌঁছানোর সেবা প্রদান করা হবে।
৩. ডিএনসিসি’র অন্তর্ভুক্ত নতুন এলাকাসহ ৫৪ ওয়ার্ডে আনুমানিক দুই লাখের অধিক পশু কোরবানি দেওয়া হবে, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম হবে। কোরবানির পশু জবাই করার জন্য ডিএনসিসি এ বছর ৩০৭ স্থানে নগরবাসিকে পশু কোরবানি দেওয়ার সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাস্তার ওপর কিংবা ড্রেনের পাশে কোরবানি না করার জন্য বিশেষ সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এবার কোরবানির জন্য সর্বমোট ২৫০ জন ইমাম ও ২৫০ জন মাংস প্রস্তুতকারীকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকি ও দ্রুত অপসারণ কাজের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
৪. জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য চার লাখের অধিক লিফলেট বিতরণ, প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং, প্রতিটি মসজিদের ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে নামাজের পরে ও জুমা’র খুতবার সময় কোরবানি পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে মুসুল্লিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
৫. রেডিও, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। ১০টি গাড়ির সাহায্যে ডিএনসিসি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেট বিতরণ ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিং করা হবে।
৬. কোরবানি উপলক্ষে আগত পশু হতে উৎপন্ন বর্জ্য অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাট সার্বক্ষণিক পরিষ্কার করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যন্য বিভাগ যেমন— প্রকৌশল বিভাগের যান্ত্রিক সার্কেল, ভাণ্ডার ও ক্রয় বিভাগ, পরিবহন বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের জন্য মোট ২টি সমন্বয় সভা করা হয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় ডিএনসিসি’র নিজস্ব ২৬৬৭ জন এবং অন্যান্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়সহ সর্বমোট ১১ হাজার ৫০৮ জন কর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত করা হয়েছে।
৭. কোরবানির পশুর বর্জ্য তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাটসমুহ দ্রুত পরিষ্কারের লক্ষে ডিএনসিসি’র নিজস্ব বর্জ্যবাহী ট্রাক, ভারী যন্ত্রপাতি ও ওয়াটার বাউজারের পাশাপাশি বাহির থেকে অতিরিক্ত গাড়ি নিয়োজিত করা হবে।
ঈদ উপলক্ষ্যে বর্জ্য পরিবহন সক্ষমতা কমপক্ষে ১০ হাজার টনে উন্নিতকরণে প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ঈদের পূর্বের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী ২ দিন নিরবিচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক বা খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি এবং ভাড়ায় পিকআপভ্যানসহ সর্বমোট ৪৯৩টি গাড়ি নিয়োজিত থাকবে।
৮. কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্বারা যাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষে জবাইয়ের স্থানে ১১টি ওয়াটার বাউজার দ্বারা তরল জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রে করার ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত উপকরণ সম্মানিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে বর্জ্য ব্যাগ সাড়ে ছয় লাখ, ব্লিচিং পাউডার ৫০ টন, এক হাজার পাঁচ ক্যান (প্রতিটি ৫ লিটার) স্যাভলন।
৯. ল্যান্ডফিলে ঈদুল আজাহার অতিরিক্ত বর্জ্য পরিবেশসম্মত ডিসপোজাল নিশ্চিত করা জন্য ৬০ X ৫০ X ১২ আয়তনের ২টি পরিখা খনন করা হবে এবং দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাসহ অতিরিক্ত যান-যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ড্রেসিং কার্যক্রমে ৫টি খননযন্ত্র, ৬টি চেইন ডোজার, ১টি ট্যায়ার ডোজার ও ১টি পে-লোডার নিয়োজিত রাখা হবে। প্রতিটি বাড়ি হতে দ্রুত বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য পর্যাপ্ত সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর ব্যবস্থা করা হবে।
১০. কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে প্লট-২৩-২৬, সড়ক-৪৬, গুলশান-২, নগর ভবন নীচ তলায় অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
১১. কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ২২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের তদারকি করার জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং ডিএনসিসি’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঈদের ছুটিকালীন কর্মস্থলে অবস্থান করার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস
কোরবানির বর্জ্য অপসারণ ডিএনসিসি’র ১১টি পদক্ষেপ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা