হাটে প্রচুর গরু থাকলেও ক্রেতা কম, লোকসানের মুখে ব্যাপারিরা
২০ জুলাই ২০২১ ২০:৩৪
ঢাকা : রাজধানীর শাহাজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে কোরববানির পশুর হাটে প্রচুর গরু থাকলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। চাহিদার তুলনায় গরু বেশি হওয়ায় কোরবানির হাটে পশুর দাম পড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রতিটি গরুর দাম কমেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে করে অনেক বিক্রেতা লোকসানের কবলে পড়েছেন। হতাশ হয়ে অনেক বিক্রেতা নির্ধারিত সময়ের আগেই গরু বিক্রি না করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। সোমবার মধ্যরাত থেকে শাজাহানপুর কোরবানির হাটে গরুর দাম কমতে শুরু করে। দাম কমার এই মাত্রা মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে আরও বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপারিদের হতাশার পরিমাণ বাড়ছে। তারপরেও কোন কোন বিক্রেতা আগামীকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষায় করতে চাচ্ছেন অন্তত চালান উঠে কিনা।
মঙ্গলবার (২০ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর শাহাজাহানপুর রেলওয়ে কলোনী মৈত্রী সংঘের মাঠে বসা কোরবানির গরু হাট সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
এদিকে বিকেল তিনটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত হাটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বাজারে প্রচুর গরু ছাগলের সমাগম থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা নেই বললেই চলে।গরুর তুলনায় অল্প কিছু সংখ্যাক ক্রেতা থাকায় দাম পড়ে গেছে। শনিবার. রোববার কিংবা সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত যে সব গরু ১ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে তা ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় স নেমে এসেছে। আবার দুইদিন আগে যেসব গরু ৮৫ থেকে ৯৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে মঙ্গলবার দুপুরের পর তা ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। দাম আরও কমে যাবে এই আশায় কোনো কোনো ক্রেতা গরু না কিনে আরও অপেক্ষা করতে যাচ্ছেন। ফলে শেষ মুর্হূতে গরু কিনতে আসা ক্রেতারা খুশি হলেও মন ভারি করে আছেন গরু ব্যাপারিরা।
এদিকে শাহাজাহানপুর রেলওয়ে কলোনী কোবানির হাটে ছোট বড় মাঝারি সব আকারের গরু থাকলেও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। বিশেষ করে ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা দামের গরু কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। অধিকাংশ ক্রেতার এই দামের মধ্যে কিনতে যাচ্ছেন। ফলে বাজারে ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা দামের গরু সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে দেড় লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বিক্রি হবে এমন গরু বিক্রি হচ্ছে হাতে গোনা কয়েকটি।
অন্যেদিতে দাম বেশি হওয়ায় শাজাহানপুর হাটে আসা, দিনাজপুরের ‘কালা মানিক’ ও সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে আসা ‘বাবুজি’ নামে দুইটি বিশাল আকৃতির গরু গত ছয়দিনেও বি্ক্রি হয়নি। শাহজাহানপুরে কোবানির হাট চালুর প্রথম দিন থেকেই এই হাটের সবচেয়ে বড় গরু হিসাবে এরইমধ্যে পরিচিতি পেলেও ‘কালো মানিক’ ও ‘বাবুজির’ নামের ২৮ মণ এবং ৩০ মন ওজনের গরু দুইটির দাম যথাক্রমে ১২ লাখ টাকা ও ১৩ লাখ টাকা দাম চাইলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। মঙ্গলবার তা কমিয়ে ৭ ও ৮ লাখ টাকা দাম চাওযা হচ্ছে। তারপরেও ক্রেতা মিলছে না।
এদিকে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা থেকে শাজাহানপুর হাটে ১৬টি গরু বিক্রি করতে এসেছেন মো. ফজল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত চারদিনে মাত্র ছয়টি গরু বিক্রি করেছে সামান্য কিছু লাভে। বাকি ১০টি গরু রয়ে গেছে। কিন্তু এক লাখ টাকা কেনা যে গরু, সে গরুর দাম ৮০ হাজার টাকার বেশি বলছে না কোন ক্রেতা। অথচ একদিন আগেও তা এক লাখ ১০ হাজার টাকা দাম বললেও বিক্রি করিনি।’
একই কথা বলেছেন জামালপুর জেলার ইসলামপুর থেকে ১৭টি গরু বিক্রি করতে এসেছেন মো. কবির সরকার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৭টি গরুর মধ্যে গত তিনদিনে ৮টি গরু বিক্রি করেছে।প্রতিটি গরু গড়ে এক লাখ টাকা করে কেনা হলেও এখনো বড় ধরনের লোকসানের কবলে রযেছি। এখনো ৯টি গরু বিক্রি করতে পারিনি। কিন্তু কোন গরুর দাম আজ ৮০ হাজার টাকা বেশি বলছে না। অথচ কেনা গড়ে এক টাকা।’
এ ব্যাপারে শাহজাহানপুর কোবানির হাটের হাসিলের টাকা উত্তোলনকারী মো. সজিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বাজারে প্রচুর গরু রযেছে। প্রথম তিন দিন গরুর দাম কিছুটা বেশি হলেও এখন বেশ সহনীয়। সারাদেশ থেকেই প্রচুর গরু আসছে। বর্তমানে বাজারে ৫ থেকে থেকে ৬ হাজার গরু রয়েছে। কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।’
সারাবাংলা/জিএস/একে