চট্টগ্রামে এবার কমলো ৫০ হাজার কোরবানি
২১ জুলাই ২০২১ ১২:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনা মহামারির মধ্যেও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ঈদুল আজহার উৎসবে শামিল হয়েছেন ধর্মপ্রাণ মানুষেরা। মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় এই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার নামাজে আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের মহিমায় মানুষকে উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি করোনার দুর্যোগ থেকে মুক্তির প্রার্থনা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদে বুধবার (২১ জুলাই) সকালে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন। এরপর শুরু হয় পশু কোরবানি। তবে করোনাকালের প্রথম ঈদুল আজহার মতো এবারও কোরবানি কম বলে জানিয়েছেন বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।
সকাল ৭টায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইমামতি করেছেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের পেশ ইমাম মোহাম্মদ আহমুদুল হক।
একইস্থানে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় জামাত।
অন্য বছরের মতো এবার জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে বিভিন্ন দলের নেতা, জনপ্রতিনিধিদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল না। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিনসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় মসজিদেই নামাজ আদায় করেছেন রাজনীতিক-জনপ্রতিনিধিরা।
প্রথম ঈদ জামাতের খুতবায় আহমুদুল হক সমগ্র দেশবাসীকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর ফরিয়াদ জানান।
চট্টগ্রাম নগরীতে এবার সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ১৬৮টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির উদ্যোগে নগরীর ৯৩টি স্থানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদ জামাতে প্রবেশের সময় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কাতারে পরস্পরের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব রাখা হয়। মুসল্লিদের মুখে মাস্ক ছিল। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন। তবে কেউ কেউ বিরত থাকলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
নামাজ আদায়ের পরপরই নগরীর বিভিন্ন অলিগলি, রাস্তায়, মাঠে, বাসা-বাড়ির সামনে কোরবানি শুরু হয়। তবে এবার অলিগলিতে-সড়কে কোরবানি কিছুটা কম চোখে পড়েছে। পশু জবাইয়ের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৩০৪টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে কোরবানির জন্য সিটি করপোরেশনের আহ্বানে তেমন সাড়া মেলেনি।
কোরবানি শুরুর আগে সকাল থেকেই বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সকাল ৯টা থেকে নগরীতে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। ৩৩০টি গাড়ি নিয়ে ৩ হাজার ৬০০ স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত আছেন। তদারকিতে আছেন ১১০ জন কর্মকর্তা।
এদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নগরীকে চারটি জোনে ভাগ করে চারজন কাউন্সিলরকে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তাদের সঙ্গে থাকবেন তিনজন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। আর পুরো নগরীতে বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের দায়িত্বে আছেন কাউন্সিলর মোবারক আলী।
কাউন্সিলর মোবারক আলী নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, এবারও পশু কোরবানির পরিমাণ নগরীতে তুলনামূলক কম। করোনা মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে নগরীতে সাড়ে ৫ লাখ পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছিল। করোনা শুরুর পর গতবছর তা চার লাখে নেমে আসে। এবার আরও ৫০ হাজারের মতো কমবে বলে তার ধারণা।
‘অনেকে লকডাউন, ছুটি মিলিয়ে গ্রামে ঈদ করার জন্য চলে গেছেন। আর্থিক সংকটও আছে। অনেকে আগে একক কোরবানি দিতেন। এবার ভাগাভাগি করে দিয়েছেন। সেজন্য কোরবানি কম হয়েছে বলে আমাদের ধারণা’, বলেন মোবারক আলী।
তবে চসিক আগের মতই নিয়মিত আড়াই হাজার টন এবং কোরবানির ৫ হাজার টন মিলিয়ে সাড়ে ৭ হাজার টন বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রেখেছে। চসিক মেয়র সকাল ৯টা থেকে সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য পুরোপুরি অপসারণের সময় বেঁধে দিয়েছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবার চট্টগ্রামে ৮-৯ লাখ পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তাদের হিসেবে গতবার চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ পশু কোরবানি হয়েছিল।
এদিকে সংগ্রহ করা পশুর চামড়া, লেজ-মাথাসহ শরীরের অবশিষ্টাংশ যাতে যত্রতত্র ফেলতে না পারে সেজন্য সতর্ক অবস্থায় আছে চসিক।
কাউন্সিলর মোবারক আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিছু ফড়িয়া চামড়া নিয়ে আসে। বিক্রি করতে না পেরে সেগুলো ফেলে চলে যায়। এটা আমরা এবার করতে দেব না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সঙ্গে তদারকিতে ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ থাকবেন।’
সারাবাংলা/আরডি/এমও
ঈদুল আজহা করোনা মহামারি কোরবানি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সিটি করপোরেশন