Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৌসুমি ব্যবসায়ীর দেখা নেই, কোরবানির চামড়া মসজিদ-মাদরাসায় দান!

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ জুলাই ২০২১ ২১:১৬

ঢাকা : রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় কোরবানির ঈদের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা মেলেনি। চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অধিকাংশ লোকজন নিকটবর্তী মসজিদ মাদরাসায় কোরবানির চামড়া দান করছেন। প্রতি এলাকার মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা ভ্যানে করে বিনামূল্যে দেওয়া পশুর চামড়া সংগ্রহ করছেন।

বুধবার (২১ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিল, মগবাজার, পুরনা পল্টন, মিরপুর ও মোহামম্মদপুর, শ্যামলী এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, পর পর কয়েক বছর চামড়া কিনে বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়ায় এবার কোন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনা শুরু করেনি।এ ছাড়াও করোনা ভাইরাস এবং আর্থিক মন্দার কারণে এবার রাজধানীর কোথাও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের আনাগোনা নেই।

কোরবানির ঈদের দিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে ও খবর নিয়ে সারাদিনেও একজন মৌসুমি চামড়া ব্যাবসায়ীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। কিংবা কেউ দেখেছেন এমন খবরও পাওয়া যায়নি! ফলে কোরবানি করা পশুর চামড়া সবাই নিকটবর্তী মসজিদ মাদরাসায় বিনামুল্যে দান করছেন। মুসল্লিদের অভিমত চামড়ার কোনো ক্রেতা নেই। তাই মসজিদ-মাদরাসায় দান না করলে এই চামড়া পচে পরিবেশ দূষণ করবে।

মিরপুর এলাকায় নিয়মিত চামড়া কিনতেন এমন একজন মৌসুমী ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পর পর কয়েক বছর চামড়া কিনে লোকসানের কারণে এ বছর চামড়া কেনার ঝুঁকি নিইনি। চামড়া কিনে এখন আর লাভ করার সুযোগ নেই। এছাড়াও করোনাভাইরাসের কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চামড়া কেনার কোনো মানে হয় না।’

চামড়া বিক্রি করতে না পারা মতিঝিল এজিবি কলোনীর বাসিন্দা মো. আবদুল আউয়াল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন আর কেউ চামড়া কিনতে আসে না। সবাই চামড়া নিকটবর্তী মসজিদ মাদরাসায় চামড়া দান করছেন। এটি এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এক সময় ছিলে, কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য মহল্লায় মহল্লায় হাতাহাতি শুরু হয়ে যেত। চামড়ার বাজারে এক ধরনের প্রতিযোগিতা ছিল। কে কোন এলাকার নিয়ন্ত্রণ করে চামড়া কিনবে তা নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যেত। তখন চামড়ার দামও ছিল। প্রতিটি গরুর চামড়া আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি করা হতো।’

চামড়ার উপযুক্ত দর না পাওয়ার অভিযোগ এজিবি কলোনীর আহম্মদ আলী, কাউসার আহমেদের।

এদিকে মিরপুর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দ এসএমএ কালাম বলেন, ‘৯০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছি। চামড়া বিক্রি করার কোনো নিয়তও ছিল না। কারণ প্রতিবছরই চামড়া দান করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর চামড়া কেনার জন্য কোনো মৌসুমী ব্যবসায়ী মহল্লায় দেখা যাযনি। ফলে বাধ্য হয়ে মহল্লার প্রায় সবাই চামড়াগুলো মসজিদে  দিয়েছেন।’

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে রাস্তার মোড়ে এনে বিক্রি করার জন্য জমা করেছেন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কাঁচা চামড়া নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় কাঁচা চামড়ায় লবণ লাগিয়ে সংরক্ষণ হচ্ছে। পরে সেখান থেকে নিয়ে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হবে।

এদিকে মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা জাফর আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর চামড়া জাতীয় পণ্যের দাম বাড়লেও কমছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। সরকারও ব্যবসায়ীদের কথা শুনে ব্যবসায়ীদের সুবিধামতো দাম নির্ধারণ করে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘কাঁচা চামড়ার চাহিদা যদি না থাকত তাহলে ব্যবসায়ীরা কেন কাঁচা চামড়া রফতানির বিরোধিতা করেন?’

উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও সারাদেশে খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে গত বছর লবণযুক্ত গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই বছর খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট সারাদেশে ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

সারাবাংলা/জিএস/একে

কোরবানি কোরবানির হাট চামড়া পশুর চামড়া মসজিদ মাদরাসা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর