চট্টগ্রাম ব্যুরো: হেজাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমীর শাহ আহমদ শফীকে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার যুবক হেফাজতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনেও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
বুধবার (২১ জুলাই) সকাল পৌনে ১০টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া আসাদুল্লাহ আসাদের (৩০) বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায়। তিনি হেফাজতে ইসলামের হাটহাজারী পৌরসভা শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসাদুল্লাহ শফী হত্যা মামলার আসামি। মামলার এজাহারেও তার নাম আছে, তদন্ত প্রতিবেদনেও আছে। এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে যে সহিংসতা হয়, তাতে আসাদের ইন্ধন, চক্রান্ত ও সহিংসতা আছে। শফী হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে হাটহাজারী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় আরও তিনটি মামলা আছে।’
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমীর শাহ আহমদ শফী মারা যান। তিনি হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন। মৃত্যুর আগে ওই মাদরাসায় তিনদিন ধরে তাকে অবরুদ্ধ করে ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে শফী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং একপর্যায়ে শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়। হেলিকপ্টারে ঢাকায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর শফীর পরিবার এবং হেফাজতে ইসলামের মধ্যে তার অনুসারীরা শফীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এজন্য তারা বাবুনগরী ও তার অনুসারীদের দায়ী করেন।
এরপর ১৭ ডিসেম্বর আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় মামুনুল হকসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়। আদালত পিবিআই’কে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেন।
তদন্ত শেষে গত ১২ এপ্রিল পিবিআই হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৪৩ জনকে আসামি করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
এদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগমনের প্রতিবাদের নামে ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় আক্রমণ, ভূমি অফিস ও ডাকবাংলোতে আগুন দেওয়াসহ সহিংস তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। তাণ্ডব থামাতে চালানো ‘পুলিশের গুলিতে মারা যায় চারজন হেফাজত কর্মী।
এসব ঘটনায় হাটহাজারী থানায় মোট ৯টি মামলা দায়ের হয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে সংগঠনটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতারের পর আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। মাসখানেকের মাথায় আবার নিজেকে আবারও আমীর ঘোষণা দিয়ে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা দেন।