Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিথিলতা বাড়ার আভাস নেই, কাল থেকেই কঠোর বিধিনিষেধ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ জুলাই ২০২১ ১১:১৫

ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঈদের এক দিন পর শুক্রবার (২৩ জুলাই) থেকে যে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার কথা ছিল, এখনো সেই সিদ্ধান্তই রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানা গেছে, বিধিনিষেধে শিথিলতা বাড়ানোর যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তা সঠিক নয়। কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে মানুষের জীবন জীবিকা ও উৎসবের চিন্তা করে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা পরিচালনা এবং দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আগামী ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোর ছয়টা পর্যন্ত আরোপিত সকল বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো। তবে এ সময় সর্বাবস্থায় জনসাধারণকে সতর্কাবস্থা থাকা মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

একই প্রজ্ঞাপনে ঈদের পর ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২ টা পর্যন্ত আবারও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপে নির্দেশনা জারি করা হয়। সে আদেশে চলমান বিধিনিষেধের মতোই সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহনসহ সকল যাত্রীবাহী যানবাহন বন্ধ এবং শপিং মল ও দোকান-পাট বন্ধ থাকবে। এর পাশাপাশি সব ধরনের শিল্প কলকারখানা বন্ধের ঘোষণাও আসে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা বিধিনিষেধ চলাকালে কারখানা খোলা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে অনুরোধ জানান। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তারা বিধিনিষেধে কল-কারখানা খোলা রাখার পাশাপাশি বিধিনিষেধ শুরুর সময় ২৩ আগস্ট থেকে অন্তত তিন থেকে চারদিন পিছিয়ে শুরু করার অনুরোধ জানান। এরপর থেকে গুঞ্জন ওঠে বিধিনিষেধ পেছানো হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, আপাতত আগের সিদ্ধান্তই বহাল আছে। ওই সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারে এমন কোনো আভাস দিচ্ছেন না কেউই।

সূত্র বলছে, কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ নিয়ে সরকার আগের অবস্থানেই রয়েছে। তবে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফেরার ক্ষেত্রে চলাচলে খানিকটা ছাড় থাকলেও রোববার থেকে কঠোর অবস্থানে থাকবে সব কিছু।

এর আগে গত শনিবার চুয়াডাঙায় বিজিবির অনুষ্ঠানে জন প্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, বিধিনিষেধ পেছানো হচ্ছে না।

বিধিনিষেধ শিথিল থাকার মেয়াদ যদি না বাড়ে তাহলে শুক্রবার (২৩ জুলাই) থেকে দুই সপ্তাহের জন্য শুরু হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ। এই সময়ে সকল সরকারি আধাসরকারি স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশপাশি সড়ক, রেল ও গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিং মল/মার্কেটসহ দোকান-পাট বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সকল পর্যটনকেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জনসমাবেশ হয় এমন ধরনের সামাজিক (বিবাত্তোর অনুষ্ঠান) (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পার্টি পিকনিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা যাবে না। এই সময়ে সরকারি সকল কর্মকর্তা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং ভার্চুয়ালি ই- নথি, ই-টেন্ডারিং, ইমেইল, এসএমএস এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করবেন।

তবে আইন শৃংখলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রপাতি), খাদ্য শষ্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, এনআইডি প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের নদী বন্দর, কার্যক্রম, টেলিফোন, ইন্টারনেট, (সরকারি/বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা (পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি, ফামাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি অত্যাবশ্যক সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে। জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি, কাভার্ডভ্যান, কার্গো, ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবর্হিভূত থাকবে। বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ, স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এর আওতাবর্হিভূত থাকবে।

কাঁচাবাজার সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা স্থানে বসতে পারবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটি নিশ্চিত করবে। অতি জরুরি প্রয়োজন (ওসুধ, চিকিৎসা, নিত্যপ্রয়োজনীয়, দাফন, সৎকার) ব্যতিত বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। না মানলে আইনগত ব্যবস্থা। ভ্যাকসিন কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে বের হওয়া যাবে। খাবারের দোকান হোটেল রেস্তোরাঁ সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে। আন্তর্জাতিক যাত্রীরা তাদের বিমানের টিকেট দেখিয়ে গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন।

এসব নির্দেশনায় মাঠে থাকবে পুলিশ র‌্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি। তাদের উদ্দেশ্যে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেস, স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। যা ১৪ জুলাই মধ্য রাতে শেষ হলে এদিন থেকে বিধিনিষেধে শিথিলতা এনে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যা ২৩ এপ্রিল ভোরে শেষ হচ্ছে।

সারাবাংলা/জেআর/এএম

করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ শিথিলতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর