চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের সিআরবিতে গাছপালা কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে হাসপাতাল বানানোর বিপক্ষে মত দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সিআরবি রক্ষায় চট্টগ্রামের মানুষের আন্দোলনের বিষয়টি তিনি ‘যথাযথ জায়গায়’ উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে পরিবেশ নষ্ট হয়, পরিবেশ ধ্বংস হয় এমন কোনো কাজ হবে না। সিআরবি চট্টগ্রামের একটি নান্দনিক জায়গা, একটি ঐতিহাসিক জায়গা। সেখানকার পরিবেশ নষ্ট হোক, গাছপালা কাটা হোক- সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের বিপক্ষে কোনো কাজ করবে না। আমি বিষয়টি যথাযথ জায়গায় উপস্থাপন করব।’
উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় সিআরবিতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট বাস্তবায়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য। প্রকল্পের মেয়াদ ১২ বছর।
দুই বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর চট্টগ্রামে বিভিন্ন নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলনে নেমেছিল। সম্প্রতি গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি উঠে এলে আবারও সোচ্চার হন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এবং চট্টগ্রামের ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালে রাস্তায় নামে মানুষ। এরপর গত ১৫ জুলাই থেকে প্রতিদিন সিআরবি এলাকায় নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন হচ্ছে।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবার তিন লাখ টাকা পাচ্ছে। কেউ অসুস্থ হলেও টাকা পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কল্যাণ ট্রাস্টে সিদ্ধান্ত হয়েছে সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের পড়ালেখার ক্ষেত্রেও অনুদান দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে নীতিমালাও চুড়ান্ত করা হয়েছে।’
‘বাংলাদেশে শুধুমাত্র সাংবাদিকদের করোনাকালীন এককালীন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আশপাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানসহ কোন দেশ করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ কোটি টাকা দিয়েছেন করোনাকালীন সহায়তার জন্য। ঈদুল আজহার আগে থেকেই সেগুলো বিতরণ শুরু হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় দেশকে নিয়ে যাওয়া এবং একটি মানবিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের জন্য তিনি সাংবাদিকদের সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকরা ক্ষমতাহীনদের ক্ষমতাবান করতে পারে। একজন সাংবাদিক যার মুখে ভাষা নেই তাকে ভাষা দিতে পারে। যে কথা বলতে ভুলে গেছে কিংবা ভয় পায় তার মুখে ভাষা দিতে পারে। যে স্বপ্ন দেখতেও ভুলে গেছে, স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়, তাকে স্বপ্ন দেখাতে পারে। দেশটা যে এগিয়ে যাচ্ছে সেই গল্পটাও মানুষকে জানাতে হবে। তাহলে মানুষ আরও স্বপ্ন দেখবে। দেশও স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে।’
‘আমরা একটি বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি। এখানে বিতর্ক থাকবে, সমালোচনা থাকবে, পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসাও হতে হবে। ভালো কাজের যদি প্রশংসা না হয়, তাহলে যারা ভালো কাজ করে তারা কখনও উৎসাহ পাবেনা। সরকারে থাকলে সবই খারাপ, বিএনপিসহ কেউ কেউ এমন মনে করলেও বিষয়টি এমন নয়। আবার নিজেরা সরকারে থাকলে সব ভাল, আমরা সরকারে থাকলে সব খারাপ।’
দেশটা কি এমনি এমনি এগিয়ে গেল- প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত সাড়ে বারো বছরে মানুষের যে উন্নয়ন হয়েছে তা কল্পনাতীত, আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে এই এগিয়ে যাওয়া।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিইউজের সহ-সভাপতি অনিন্দ্য টিটু ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম।