Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নেই আইসিইউ, অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ জুলাই ২০২১ ১৪:৫৮

ঢাকা: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঝালকাঠিতে। তবে রোগী বাড়লেও চিকিৎসা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই জেলার সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে নেই কোনো আইসিইউ বেড। সঙ্গে যোগ হয়েছে অক্সিজেন সংকট। ফলে সংকটাপন্ন কোনো রোগী আসার পরপরই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বরিশালে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঝালকাঠি হাসপাতালকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট থেকে উন্নীত করে ১০০ শয্যার হাসপাতাল করা হয়েছে। কিন্তু ১০০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন, তা নেই। হাসপাতালটিতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার আছেন মাত্র ৯ জন। অ্যানেস্থেশিওলজিস্ট রয়েছেন মাত্র একজন। চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরও সংকট রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন রতন কুমার ঢালী সারাবাংলাকে বলেন, সিভিল সার্জন বলেন, হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। কোনো আইসিইউ নেই। রোগীর চাপ বাড়লে অক্সিজেনের সংকটও দেখা দেবে। বর্তমানে কোভিড রোগীর সংখ্যা ওঠানামা করছে। এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেলে রোগীদের চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হবে।

সদর হাসপাতালের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে রতন কুমার ঢালী বলেন, কোভিড রোগী ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত চার থেকে পাঁচশ রোগীকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে জনবল সংকট যেমন রয়েছে, তেমনি হাসপাতালে এক্সরে মেশিনসহ ডায়াগনসিসের আরও কিছু যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে গেছে। রোগী আনা-নেওয়ার জন্য তিনটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক রয়েছেন দু’জন। এতসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে কোভিড রোগী বেড়ে গেলে আমাদের চরম দুরবস্থায় পড়তে হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, হাসপাতালে কোভিড রোগীদের খাবার সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে কর্মরত একজন জানান, কোভিড রোগীর খাবারের জন্য প্রতিদিন বরাদ্দ রয়েছে ৩০০ টাকা। অন্যদিকে সাধারণ রোগীদের জন্য প্রতিদিনের বরাদ্দ ১২৫ টাকা। কিন্তু সাধারণ রোগীদের যে খাবার দেওয়া হয়, ঠিক সেই একই খাবার দেওয়া হচ্ছে কোভিড রোগীদের।

এ সম্পর্কে ঝালকাঠি হাসপাতালের সিভিল সার্জন রতন কুমার ঢালী সারাবাংলাকে জানান, এমন কোনো অভিযোগ তার জানা নেই। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি দেশের অন্য সব এলাকার মতোই। সাম্প্রতিক সময়ে এখানে বেড়েছে সংক্রমণ। একইভাবে সারাদেশে জারি করা বিধিনিষেধ কার্যকর হলে এখানেও প্রান্তিক পর্যায়ের জনসাধারণকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।

ঝালকাঠি জেলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা প্রশান্ত দাস হরি সারাবাংলাকে বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকার একটি কার্যকর মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেনি। যেকোনো মহামারি দেখা দিলে তা লকডাউনের মাধ্যমে মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে বিধিনিষেধ দেওয়ার আগে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের বিষয়ও চিন্তা করতে হবে। সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে, ত্রাণও দিচ্ছে। তবে যা দিচ্ছে, তার চেয়ে প্রচার হচ্ছে বেশি। কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। ৩৩৩ নাম্বারে ফোন করলে সবাই কি সাহায্য পাচ্ছে? ৬ লাখ মানুষ এই নম্বরে ফোন করে খাদ্য সামগ্রী চাইলে তার কতজনে পাচ্ছে, এটাই প্রশ্ন।

তিনি আরও বলেন, মহামারি করোনা মোকাবিলা করতে পরিকল্পিতভাবে লকডাউন, জনসচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রত্যেক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একদিকে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেবেন, অন্যদিকে খোলা ট্রাকে করে স্বল্প মূল্যে খাবার বিক্রি করবেন— তাহলে তো লাভ হবে না। কারণ যখন ওএমএসের আওতায় ট্রাকে করে স্বল্প মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হয়, তখন সেখানে অনেক মানুষের জনসমাগম হয়, সেখানে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানে না। ফলে সেই জায়গাটি কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এসব কিছু ভেবে সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জেলার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী সারাবাংলাকে বলেন, সদর হাসপাতালে আইসিইউ বেড স্থাপনের দরপত্র আহ্বান হয়েছে। শিগগিরই আইসিসি স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। কিন্তু এই মহামারি মোকাবিলা করতে জনগণকে সচেতন করার বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। জনগণ প্রশাসনের গাড়ি দেখলে মুখে মাস্ক পরে, গাড়ি চলে গেলেই মাস্ক খুলে ফেলে। এটাই বড় সমস্যা। আমরা চেষ্টা করছি জনগণকে সচেতন করার জন্য।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, ৩৩৩ নাম্বার ফোন করলে সরকারি লোক ফোন করা ব্যক্তিকে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এসএসএ

অক্সিজেন সংকট করোনা সংক্রমণ করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি জনবল সংকট সদর হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর