Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সদরঘাটে জনস্রোত, বিধিনিষেধে গণপরিবহন না থাকায় ভোগান্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ জুলাই ২০২১ ১০:৫৫

ঢাকা: সকাল থেকে শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। আর এই বিধিনিষেধ শুরুর আগেই রাজধানীতে পৌঁছাতে সদরঘাটে নেমেছে মানুষের ঢল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে রাতের লঞ্চে রওনা দিয়েছিলেন তারা। তাদের কেউ সদরঘাটে পৌঁছেছেন ভোরে, কেউ সকালে। এরই মধ্যে বিধিনিষেধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তারা পাননি কোনো ধরনের গণপরিবহন। তাতে লঞ্চ থেকে সদরঘাটে নামা হাজার হাজার মানুষকে পড়তে হয়েছে ভোগান্তির মুখে। হাতে ব্যাগ-বস্তা, কোলে সন্তানকে নিয়েও অনেককে হেঁটেই গন্তব্যের পথে রওনা দিতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকালে সদরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। গোটা এলাকা লোকে লোকারণ্য। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে তারা এসেছেন। কেউ যাবেন গাজীপুর, কেউ নারায়ণগঞ্জ, কেউ আশুলিয়া, কেউ টঙ্গী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা তো আছেনেই। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের সবার মাথায় হাত। এর মধ্যে অসুস্থ যারা, তাদেরও কাউকে কাউকে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে ঘাটে বসে থাকতে দেখা গেছে।

বরিশাল থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন রহিম। যাবেন গাজীপুরে। কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। সদরঘাটে নেমে অসুস্থ মা’কে নিয়ে কান্নাকাটি করছিলেন। জানালেন, ৯৯৯-এ ফোন করে সাহায্য চেয়েও অ্যাম্বুলেন্স পাননি। আশপাশের কোনো হাসপাতালে নেওয়ার কথা ভাবলেও রিকশা-ভ্যানও পাচ্ছে না।

গাজীপুরে পোশাক কারখানায় কাজ করেন হাবিব ও নাহার। তিন সন্তান নিয়ে এসেছেন ঢাকায়। দুপুর সাড়ে ৩টায় বরিশাল থেকে লঞ্চে ওঠেন। রাত ৮টায় লঞ্চ ছাড়ে, সকাল ৭টায় এসে পৌঁছায় সদরঘাটে। বলতে গেলে কাল দুপুরে লঞ্চে ওঠার পর থেকেই তেমন কিছু খেতে পারেননি, বাচ্চাদেরও খাওয়াতে পারেননি। অশ্রুসিক্ত নাহার বলেন, ‘বাচ্চাগুলো কি না খেয়ে মরবে?’

সদরঘাটে নেমেও কোনো লাভ হয়নি। কারণ বিধিনিষেধের কারণে সদরঘাটের দোকানগুলোও সকাল থেকেই বন্ধ। ফলে ক্ষুৎপিপাসায় আরও কাতর হয়ে পড়ছে মানুষগুলো।

সদরঘাটে কথা হয় একটি বেসরকারি অফিসে কর্মরত আবদাল রহমানের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এভাবে সরকার আমাদের সঙ্গে কঠোরতা করতে পারে না। আমাদের আসতে না দিলে তো আমরা আসতাম না। কিন্তু লঞ্চ চালু রেখে আমাদের আসতে দিয়ে এখন সকাল থেকে সবকিছু বন্ধ রাখাটা যৌক্তিক হলো না। আমার বাসা মিরপুরে। এখন সদরঘাট থেকে মিরপুর কিভাবে যাব? সঙ্গে বাচ্চা ও বৃদ্ধ মাও রয়েছেন। এভাবে কঠোর না হয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত সবকিছু খোলা রাখলেও আমাদের এভাবে কষ্ট পেতে হতো না।

বিজ্ঞাপন

গুলিস্তানে কথা হয় ক্যানসার আক্রান্ত হানিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ক্যানসারের রোগী। এসেছি ভোলা থেকে। সকাল ৬টায় সদরঘাটে নামছি। এরপর হাঁটতে হাঁটতে গুলিস্তান পর্যন্ত আসছি। আমার ভাইয়ের বাসা শ্যামলী। সেই পর্যন্ত কি হেঁটেই যেতে হবে?’

হানিফ জানান, ২৮ জুলাই চিকিৎসককে দেখানোর কথা রয়েছে তার। ২৩ তারিখ থেকে সবকিছু বন্ধ জেনে আগেই চলে এসেছেন। কিন্তু ভোলা থেকে ঢাকায় এসে এখন সদরঘাট থেকে শ্যামলী যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হানিফ বলেন, ‘দুপুর পর্যন্ত গাড়ি চললে আমাদের আর এই কষ্ট হতো না। আমি মরা মানুষ। হাঁটতেও পারি না। কীভাবে যাব আমি, একটু বলো বাবা?’

কাকরাইল মোড়ে কথা হয় হনুফা বেগমের সঙ্গে। বাড়ি পটুয়াখালী। টঙ্গীর একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। শনিবার থেকে কারখানায় যেতে হবে বলে জানানো হয়েছে। সে কারণেই এসেছেন ঢাকায়। হনুফা বলেন, ‘পটুয়াখালী থেকে কাল সকাল ১০টায় লঞ্চে উঠছি। এরপর থেকে আর কোনো খাওয়া নেই। সকাল ৬টায় সদরঘাটে আসছি। এখন আমি কীভাবে আমি টঙ্গী যাব?’

হনুফা বেগম আরও বলেন, গার্মেন্টস থেকে বলছে, কাল থেকে অফিস। তাই আসছি। আমাদের যদি বলত অফিস খুলবে না, তাহলে তো আমরা আসতাম না। আবার লঞ্চ চালু করে আসার সুযোগ দিয়ে গাড়ি বন্ধ রাখা— এটা কেমন ব্যবহার সরকারের?

শুক্রবার সকাল থেকে বিধিনিষেধ শুরু হয়ে যাওয়ায় ঢাকা ফেরত এমন ভোগান্তি পোহানো মানুষের সংখ্যা কম নয়। কেবল সদরঘাট নয়, গাবতলী-মহাখালী বাস টার্মিনালেও যারা বিভিন্ন জেলা থেকে বাসে করে এসেছেন, তারাও অনেকেই পরিবহন না পেয়ে ঢাকার ভেতরের গন্তব্যগুলোতে যেতে পারছেন না।

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

কঠোর বিধিনিষেধ জনস্রোত সদরঘাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর