Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এনআইডি কার্ড আর নামের তালিকা নিলেও ত্রাণ চোহে দেহি নাই’

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ জুলাই ২০২১ ১৮:৪৮

ঢাকা: বস্তির জীর্ণ ঘরের ফাঁকগলে সূর্যের আলো আসে। তামাটে মুখগুলো রোজ সকালে নতুন আশা নিয়ে চাতক চোখে দুয়ারে দাঁড়ায়। কিন্তু সম্ভাবনার ছিটেফোঁটাও ধরা দেয় না। বিড়ম্বিত ভাগ্যে পরিবর্তন আসে না তাদের। এভাবেই নিত্যকার দিনযাপন। এ দৃশ্য মগবাজারের ওয়্যারলেস বস্তির প্রতিটি ঘরে ঘরে। করোনার মহামারির শুরু থেকে ১০ হাজার পরিবারের এই বস্তির মানুষদের দুঃখ-দুর্দশা ও অভাব-অনটনের চিত্র একটুও তাড়িত করেনি বিত্তবানদের। এমনকি এগিয়ে আসেনি কোনো সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাও।

বিজ্ঞাপন

বছর দেড়েক আগেও এই বস্তির প্রতিটি সকাল হতো শিশুদের কলকাকলি আর কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটে চলায়। করোনার মহামারি কেড়ে নিয়েছে সেইসব মুখরতা, দিয়েছে কেবল বেঁচে থাকার আকুতি। করুণাই যেন বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ক্ষুধা-দারিদ্র পীড়িত এই ১০ হাজার পরিবারের। অনেকে অবশ্য সেই করুণা থেকে বঞ্চিত। জনপ্রতিনিধিদের লোকজন এসে এনআইডি কার্ডের ফটোকপি আর নাম-ঠিকানা নিয়ে গেলেও বিড়ম্বিত ভাগ্যে জোটেনি এক মুঠো চাল ও ডাল।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৪ জুলাই) বেলা ১১ টায় মগবাজার ওয়্যারলেস বস্তিতে গিয়ে কথা হয় বস্তিবাসীদের সঙ্গে। তাদের অনেকেরই অভিযোগ, যখন ভোট হয়, আমরা ভোট দিই। এ করোনার সময় আমাদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে একদিনও এই বস্তিতে আসতে দেখিনি। যদিও নির্বাচনের সময় একাধিকবার তারা ভোটের জন্য এসেছে।

ওয়ারলেস গেট বস্তির নজরুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে ব্যবসা করতাম। এহুন রিকশা চালাই। তাও প্রতিদিন চালাইতে পারি না। পুলিশ রিকশার চাকার হাওয়া ছাইড়্যা দেয়। রিকশা ডাম্পিং করে। আবার রিকশা নিয়াও যায়। এই ভয়ে আপাতত রিকশাও চালাইতেছি না। শুক্রবার একটা ক্ষ্যাপ নিয়া মাদারটেক গেছিলাম। পথে পুলিশ ধরে রিকশা উল্টায়ে রাহে। এরপর শাস্তি হিসেবে প্রায় তিন ঘণ্টা আমারে দাঁড় করাইয়্যা রাহে। পড়ে ছাইড়্যা দেয়। রিকশাটা ডাম্পিং থেকে বাঁচাতে খরচ হয় ১০০ টাহ্যা।’

একই সময় কথা হয় বস্তিবাসী সাব্বিরের সঙ্গে। সারাবাংলাকে সাব্বির বলেন, ‘কোনোরহমে বাঁইচ্যা আছি। রাস্তার ধারে চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। পুলিশ আসলে দৌড় দিয়া পালাই। সময় সময় একটু ম্যানেজ করে চলি।’ তিনি বলেন, ‘এই বস্তিতে এহুন পর্যন্ত কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। আমরা খুবই গরিব। বৃষ্টি আইলে ঘরের চালের ফুটা দিয়া পানি পড়ে। সব সময়ই বাইরে থাকি। ঘরে ফিরা সব একসাথেই এক জায়গায় বাস করি। গত দুই বছরে আমগো কারও জ্বর হয় নাই। আল্লায় আমাগো ভালা রাখছে।’

সাব্বির বলতে থাকেন, ‘আমাগো কষ্ট অনেক। এর মধ্যে ক্ষুধার কষ্ট বেশি। বৃদ্ধ বাবা-মা, ছোট ভাই-বোন যহন না খাইয়্যা থাহে তহন কষ্ট লাগে বেশি। গত দেড় বছরে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। আমাগো এনআইডি কার্ড আর নামের তালিকা নিয়া গেলেও ত্রাণ চোহে দেহি নাই।’

এ সময় আরেক বস্তিবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশের মন্ত্রী এবং এমপিদের ঘরে বসে না থেকে আপনাদের মতো সরেজমিনে এসে ঘুরে যাওয়া উচিত। তাহলে তারা আমাদের ব্যথা বুঝবেন।’

আরেক বস্তিবাসী ফাহিমা বেগমের বয়স ৭০ বছর। সারাবাংলাকে তিনি জানান, আগে তাদের চায়ের দোকান ছিল। স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতেন। করোনা মহামারির পর থেকে চায়ের দোকান বন্ধ। এখন মানুষের কাছ থেকে চেয়ে-চিন্তে খেতে হচ্ছে। কোনো দিন এক বেলা আবার কোনো দিন দুই বেলাও না খেয়ে থাকতে হয় তাদের। আরেক বস্তিবাসী রাজিয়া বেগম (৭৫) জানান, আগে ১২ মাস তিনি পিঠা বিক্রি করতেন। এখন ভিক্ষা করে চলেন।

বস্তিবাসীদের সহযোগিতার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে উত্তর সিটি করপোরেশনের সচিব মাসুদ আলম সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ত্রাণ-সামগ্রী কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আমরা দিয়ে থাকি। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়ারলেসের বস্তিবাসী কেন ত্রাণ-সামগ্রী পায়নি সেই বিষয়টি আমি এখনই খতিয়ে দেখছি।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

বস্তি মগবাজার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর