৫ বছরেও শেষ হয়নি ‘জাহাজ বিল্ডিং’য়ের ১০ জঙ্গির বিচার
২৬ জুলাই ২০২১ ১১:০৩
ঢাকা: ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে ‘জাহাজ বিল্ডিং’য়ের জঙ্গি আস্তানায় ভোরে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক ঘণ্টার ওই অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত ও একজন আহত হন। ওই ঘটনার দু’দিন পর মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শাহ জালাল আলম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে এখনও সেই মামলার বিচার কাজ শুরু হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এমন অবস্থা হয়েছে। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে চার্জগঠন করে মামলাটির বিচারকার্য দ্রুত শেষ করার কথাও জানান তিনি।
বর্তমানে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে অধিকতর চার্জশুনানির জন্য রয়েছে। সর্বশেষ ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে অধিকতর চার্জশুনানির জন্য গত ৯ জুন ধার্য ছিলো। কিন্তু এরইমাঝে করোনার কারণে আবারও আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির জানান, ২০১৯ সালের মে মাসে মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলাতে কোনো আসামি পলাতক থাকলে বিচারকার্য শুরু করতে একটু সময় লেগে যায়। এ মামলায়ও একজন আসামি পলাতক রয়েছে। এজন্য সময় লেগেছে। অন্যান্য প্রসেসিং শেষে আমরা চার্জশুনানি শুরু করি। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবরোধে অনেকটা সময় আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এজন্য কার্যক্রম তেমনটা এগোয়নি। পরিবেশ স্বাভাবিক হলে দ্রুত মামলার বিচার শেষে রায় ঘোষণা করতে পারবেন আদালত ।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের এক আইনজীবী সুব্রত দেবনাথ রানা জানান, বর্তমানে মামলাটি অধিকতর চার্জশুনানির জন্য রয়েছে। এই মামলায় কিছু গ্যাপ রয়েছে। মামলার শুনানিতে আমরা সেগুলো তুলে ধরবো। এরপর যদি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়ে যায় তাহলে ট্রায়ালে গিয়ে আসামিদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
মামলায় চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলো- সালাহ্ উদ্দিন কামরান (৩০), রাকিকুল হাসান রিগ্যান (২১), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসরুল্লা হক ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে কুলমেন (৩৩) ও হাদিসুর রহমান সাগর (৪০)।
আসামিদের মধ্যে আজাদুল কবিরাজ পলাতক, আব্দুর রউফ ও আবুল কাশেম জামিনে মুক্ত আছে। অপর ৭ আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
২০১৯ সালের ১৮ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক দশ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ওইদিন সঙ্গে আজাদুল কবিরাজ নামের পলাতক এক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর গত ৯ মে মামলাটি বিচারের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে ‘জাহাজ বিল্ডিং’য়ের জঙ্গি আস্তানায় রাতভর অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক ঘণ্টার ওই অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত ও একজন আহত হন। তারা সবাই জেএমবি সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই ঘটনার দু’দিন পর মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শাহজালাল আলম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় দশ জনকে আসামি করা হয়।
সারাবাংলা/এআই/এমও