ডিএনসিসি’র দুর্যোগ মোকবিলা প্রকল্পে ব্যয় ও সময় বাড়ছে
২৭ জুলাই ২০২১ ০৮:১৫
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য নেওয়া একটি প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মেয়াদও। এজন্য ‘আরবান রেজিলিয়েন্ট প্রজেক্ট: ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশন পার্ট (ডিএনসিসি পার্ট)’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৭৪৬ কোটি টাকা। এখন ৬৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮১২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদও এক বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কোভিড-১৯-এর কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক বছর মেয়াদ বেড়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত হয়। কিন্তু এর মধ্যেও বাস্তবায়ন শেষ না হওয়ায় এখন প্রথম সংশোধনীতে প্রায় ১ বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরী ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভৌত অবকাঠামোগত নির্মাণ ক্রুটির কারণেএ শহরের ঝুঁকি আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের ৮৫ শতাংশ ভবন সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে কারণে এশিয়ার মধ্যে ঢাকাকে সবচেয়ে বিপদাপন্ন নগর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু ঢাকা মহানগরীই নয়, বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী হিসেবে সিলেটও অত্যন্ত দুর্যোগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দক্ষ জনবল, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দুর্যোগ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
এ লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজউক, ফায়ারা সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সমন্বয়ে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে ইমার্জেন্সি অপারেটিং সেন্টার ও ডিএমআর নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য ১৮টি গ্রিনফিল্ড টাওয়ার নির্মাণের অঙ্গ নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ ইক্যুইপমেন্ট এবং আইসিটি ইক্যুইপমেন্ট আমদানির জন্য সিডি ভ্যাট প্রদান, জিআইএস অঙ্গ সার্ভিস খাতে স্থানান্তর, বিটিআরসি থেকে ফ্রিকোয়েন্সী ক্রয়, নতুন ইকোনমিক কোড ব্যবহার ইত্যাদি করে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্পটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ৫৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ৫২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যেটি মোট বরাদ্দের ৭১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংশোধিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ইমারজেন্সি অপারেটিং সেন্টার এবং ১০টি জোন অফিস (স্যাটেলাইট কন্টোল রুম) প্রতিষ্ঠান করা হবে। পাশাপাশি ডিএমআর নেটওয়ার্ক স্থাপন, ঢাকা ও সিলেট শহরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জন্য ইমারজেন্সি কন্ট্রোল রুম ও ওয়্যারহাউজ নির্মাণসহ দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।’
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্র জানায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন কৌশল অধ্যায়-৭ এ সিটি করপোরেশনের জন্য যেসব উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে প্রধান হলো- মানব সম্পদ উন্নয়ন নিয়মিতকরণ, বিনিয়োগ সহায়ক টেকসই নগর উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা যেমন সড়ক সংযোগ, অবকাঠামো নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সিটি করপোরেশনগুলোর সাংগঠনিক দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা উন্নীতকরণ করা। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মাধ্যমে যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেগুলো এই কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম