কঠোর বিধিনিষেধ চলবে, খুলছে না শিল্প কারখানা
২৭ জুলাই ২০২১ ১৭:৩৬
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ ৫ আগস্টের আগে উঠছে না। বরং আরও কীভাবে কঠোরতা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর এর মধ্যে শিল্প কারখানা খোলারও অনুমতি মিলছে না।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সচিবালয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে করণীয় ঠিক করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য সচিবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান ও সেনাবাহিনী, বিজিবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যে লকডাউন (বিধিনিষেধ) চলছে তা চলতে থাকবে। পাঁচ আগস্ট পর্যন্তই চলবে। আমাদের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ অনেকেই অনুরোধ করেছিলেন, শিল্প কারখানা খুলে দিতে। কিন্তু আমরা সে অনুরোধ গ্রহণ করতে পারছি না।’
এদিকে বৈঠকে উপস্থিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, ‘সংক্রমণ যেভাবে ছড়িয়েছে তাতে লকডাউনে (বিধিনিষেধ) সংক্রমণ কমবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।’
এর আগে গত ১৩ জুলাই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখানে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ রেখে কঠোর বিধিনিষেধ পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
কঠোর বিধিনিষেধে যেসব নির্দেশনা
১। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
২। সড়ক, রেল ও গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
৩। শপিং মল/মার্কেটসহ দোকান-পাট বন্ধ থাকবে।
৪। সব পর্যটনকেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ থাকবে।
৫। জনসমাবেশ হয় এমন ধরনের সামাজিক (বিবাত্তোর অনুষ্ঠান) (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পার্টি পিকনিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৬। আদালতসমূহের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
৭। ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
৮। সরকারি সকল কর্মকর্তা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এসএমএস এবং হোয়াটসঅ্যাপ) দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করবেন।
৯। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন: কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রপাতি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, এনআইডি কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি ফায়ার সার্ভিস, নদীবন্দর কার্যক্রম, টেলিফোন, ইন্টারনেট, (সরকারি/ বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা (পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি, ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি অত্যাবশ্যক সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর কর্মচারী যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
১০। বিভাগীয় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থবিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
১১। জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/ লরি, কাভার্ডভ্যান, কার্গো, ভেসেল নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
১২। বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ, স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এর আওতাবর্হিভূত থাকবে।
১৩। কাঁচা বাজার সকাল নয় টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলাস্থানে বসতে পারবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটি নিশ্চিত করবে।
১৪। অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ, চিকিৎসা, নিত্যপ্রয়োজনীয়, দাফন, সৎকার) ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৫। ভ্যাকসিন কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে ভ্যাকসিন নিতে বের হওয়া যাবে।
১৬। খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তরা সকাল আট টা থেকে রাত আট টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
১৭। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে। আন্তর্জাতিক যাত্রীরা তাদের বিমানের টিকেট দেখিয়ে গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন।
১৮। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয় নির্দেশনা দেবে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
১৯। ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেস, স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
২০। জেলা ম্যাজিস্ট্রেস জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আনসার নিয়োগ ও টকলেন অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদফতর এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবে।
২১। জনপ্রশসন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেস নিয়োগ নিশ্চিত করবে।
২২। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
এর বাইরে গত ১৯ জুলাই আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিধিণিষেধ চলাকালীন সবধরনের প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহনসহ সব কিছু বন্ধ থাকলেও খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ মিল কারখানা খোলা থাকবে। পাশাপাশি কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের কাজের অনুমতি থাকছে বিধিনিষেধের মধ্যে। এছাড়া ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় উৎপাদনকারী শিল্প চালু রাখা যাবে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম