Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচনের যাদুকর— প্রশান্ত কিশোর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৭ জুলাই ২০২১ ১৯:১১

প্রশান্ত কিশোর, তাকে রাজনৈতিক পরামর্শক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলেও কেবলমাত্র পরামর্শক বললে তার ব্যাপারে কম বলা হয়। বরং, নির্বাচনি বৈতরণী পার করে দেওয়ার ব্যাপারে ভারতে ৯০ শতাংশ সাফল্য রয়েছে তার ঝুলিতে।

কিন্তু, এমন মানুষের কর্মকাণ্ডে কোনো সাধারণত্বের ছাপ নেই। তিনি টেলিভিশনে খবর দেখেন না, পত্রিকা পড়েন না, সাধারণত ই–মেইল করেন না, কোনো ঘটনার নোটও নেন না। এক দশক ধরে তিনি ল্যাপটপও ব্যবহার করেন না। প্রশান্ত কিশোর একটিমাত্র গেজেটই ব্যবহার করেন, তা হলো সেলফোন। তিন বছরে তিনি টুইটারে ৮৬টি পোস্ট করেছেন। যদিও টুইটারে তার পাঁচ লাখ ফলোয়ার। বরাবরই কাজ পাগল মানুষ তিনি।

তিনি কাজ ও জীবনের ভারসাম্য তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। সত্যিকার অর্থে কাজের বাইরে কোনো কিছুতেই তার আগ্রহ নেই।

রাজনৈতিক পরামর্শক হিসেবে প্রশান্ত কিশোরের যাত্রা শুরু ২০১১ সালে। এরপর থেকে তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান আই প্যাক অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। নয়টি নির্বাচন নিয়ে কাজ করে আটটিতে সফল হয়েছেন তারা। তিনি যে শুধু একটি রাজনৈতিক দল নিয়ে কাজ করেছেন এমনটা নয়; বিভিন্ন দলের হয়ে কাজ করেছেন তিনি।

এসব সাফল্যের কারণে বায়োপিক তৈরির প্রস্তাবও পেয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ডিজনি, নেটফ্লিক্স, এমনকি বলিউড তারকা শাহরুখ খান তাঁর জীবনকাহিনি অবলম্বনে সিনেমা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু এসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন প্রশান্ত কিশোর।

নির্বাচনি পরামর্শক হিসেবে প্রশান্ত কিশোরের কাজে বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন বিজেপি’র হয়ে কাজ করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। আবার এই মোদির কট্টর সমালোচক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হয়েও কাজ করেছেন তিনি। তার হাত ধরেই সর্বশেষ মে মাসের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় জয় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের।

নিন্দুকরা বলে থাকে, খুব সতর্কতার সঙ্গে রাজনীতিক নির্বাচন করেন প্রশান্ত। যাদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরই কৌশলে গ্রাহক হিসেবে বেছে নেন।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রশান্ত কিশোর ঘোষণা দিয়ে পরামর্শক পেশা ছেড়ে দিয়ে নতুন কিছু করার ঘোষণা দিলেও সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীসহ বিভিন্ন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিবিরোধী একটি জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশান্ত কিশোরের ভাষ্য, সবই জল্পনা।

তিনি বলেন, অবশ্যই এমন কিছু করবেন না, যা তিনি আগে করেছেন।

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আরও তিন বছর রয়েছে। প্রশান্ত কিশোর বিশ্বাস করেন, বিজেপি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেনি। এখানে যে কোনো দলের সুযোগ রয়েছে। নতুন কিংবা বর্তমান যে কোনো দলের জন্যই এমন হতে পারে। যে কোনো দল একা কিংবা জোটবদ্ধভাবে ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে।

কংগ্রেসকে নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তিনি বলেন, কংগ্রেসের ভুল নিয়ে মন্তব্য করার তিনি কেউ নন। দলটির যে সংকট, তা বেশ গভীর। যা গত এক দশকে ভোটের ফলে প্রভাব ফেলছে।

কিশোর বলেন, দেশজুড়ে রাজনীতি করবে, এমন একটি দল তৈরির কথা বলা সহজ, কিন্তু গড়া কঠিন। আর তৃতীয় একটি জোট গঠন করা কার্যকরও হবে না, স্থায়ীও হবে না। আর এমন কোনো জোট ভোট পরীক্ষাতেও অংশ নেয়নি।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজেপি আবারও ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করবে। তবে এটাও ঠিক, বিজেপি অজেয় নয়। সুযোগ আছে বিজেপিকে হারানোর। এমনকি এমন উদাহরণও আছে, ঠিকঠাক কৌশল গ্রহণ করলে এবং শ্রম দিলে তাদের হারানো যায়।

প্রশান্ত কিশোরের বক্তব্য হলো, ভারতে কোনো রাজনৈতিক দলের জয়ের সঙ্গে জনপ্রিয়তার সম্পর্ক নেই। যারা ভোটে জয়লাভ করেছে, তারা ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। ২০১৯ সালের বিজেপি যখন জিতেছিল, তখন তারা ভোট পেয়েছিল ৩৮ শতাংশ। আর আসন পেয়েছিল ৩০০-এর বেশি।

প্রশান্ত কিশোর ও তার প্রতিষ্ঠান আই–প্যাক (ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি) কিভাবে কাজ করে, তার একটা উদাহরণ তিনি দিয়েছেন। কোনো দলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় চার হাজার কর্মী কাজ করেন, যাদের প্রত্যেকেই কঠোর পরিশ্রমী।

তিনি বলেন, নির্বাচনে ভালো করার জন্য যা করতে হয়, সেই কাজে তারা সাহায্য করে থাকেন। মূলত: দলের যে শক্তি, তা কয়েকগুণ বাড়াতে তারা কাজ করে থাকেন।

প্রায় এক দশক ধরে নির্বাচন নিয়ে কাজ করছেন প্রশান্ত কিশোর। এই কাজ করতে গিয়ে তার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। যেমনঃ নির্বাচনের ফলাফলে প্রচারসভার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে খরচ বেড়ে গেছে। ফলে অনেকের জন্য রাজনীতিতে আসা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভারতের রাজনীতি এবং সমাজের মেরুকরণ হয়েছে অনেক বেশি।

প্রশান্ত কিশোরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারতের যে ৮০ কোটি ভোটার রয়েছে, তারা আসলে কিসের ওপর নির্ভর করে ভোট দিয়ে থাকেন। এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জনকল্যাণ-পরিচয়-ক্ষমতায়ন-ওই প্রার্থীর কাছে যাওয়ার সুযোগ—এসব কিছুর ওপর নির্ভর করে ভোটাররা ভোট দিয়ে থাকেন।

উদাহরণ হিসেবে প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, বিহারে তার জন্ম। তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ২০১৫ সালে এই রাজ্যের ৪০ হাজার মানুষের গিয়ে জানতে চেয়েছিল রাজ্যের মানুষ আসলে কী চায়।

এ প্রসঙ্গে কিশোর বলেন, সেই সময় রাজ্যের অন্যতম ইস্যু ছিল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। তারা অনুসন্ধানে এটাও জানতে পেরেছিলেন যে, সেখানকার থানাগুলোয় যেসব অভিযোগ আসে, তার প্রতি পাঁচটির একটি এই নিষ্কাশন সংক্রান্ত।

এমন কাজ গত বছর পশ্চিমবঙ্গেও করেছিলেন কিশোর। এই রাজ্যের মানুষদের অভিযোগ শুনতে একটি হেল্প লাইন চালু করেছিলেন তিনি। এই হেল্প লাইনে প্রায় ৭০ লাখ অভিযোগ এসেছিল। এসব অভিযোগের মধ্য থেকে ২৬ লাখ অভিযোগের সুরাহা করেছিল রাজ্য সরকার। এই টোটকা কাজে এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য। এ বছর বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছে দলটি।

একসময় রাজনীতি করেছেন প্রশান্ত কিশোর। এরপর রাজনীতি ছেড়ে তিনি হয়েছেন রাজনৈতিক পরামর্শক। এতে সাফল্য এসেছে। কিন্তু তার ধারণা, রাজনীতি ঠিক তার জন্য নয়। তার ভাষ্য, তিনি আসলে রাজনীতি ঠিকঠাক বুঝি না। তবে তার সাধারণ বিবেচনাবোধ আছে। আর আমি মানুষের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শোনেন আর চাপ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন।

সারাবাংলা/একেএম

নির্বাচনি পরামর্শক প্রশান্ত কিশোর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর