পীরগঞ্জে নদী ভাঙন রোধে ১৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব
২৮ জুলাই ২০২১ ১০:৫৮
ঢাকা: দেশের অন্যান্য এলাকার মতোই রংপুরের পীরগঞ্জও নদীবিধৌত। এই উপজেলায় করতোয়া নদী বর্ষাকালে যথেষ্টই প্রমত্তা হয়ে ওঠে। এই সময়ে ভারী বর্ষণ হলে নদীর তীর ভাঙে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় তীরবর্তী এলাকার সব ধরনের স্থাপনা। অন্যদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নানা ধরনের জলাশয় থাকলেও নিয়মিত খনন না করায় সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়াসহ চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সেচসহ মৎস্য চাষও ব্যাহত হচ্ছে। আর সে কারণেই নদী ভাঙন রোধ, তীর সংরক্ষণ ও জলাশয় খননের জন্য প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার নদী তীর সংরক্ষণ, ছোট নদী, খাল-বিল পুনঃখনন ও জলাবদ্ধতা নিরসন’ শীর্ষক এই প্রকল্পটি এরই মধ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে নদী ভাঙন থেকে রক্ষার পাশাপাশি অতিরিক্ত ১১ হাজার ৬০৬ মেট্রিক টন ধান এবং ২ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন অন্যান্য ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে বলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আশা করছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৪ জানুয়ারি প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশ প্রতিপালন করায় প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপনের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পীরগঞ্জ দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর জেলার একটি উপজেলা। যমুনেশ্বরী নদী এই উপজেলার মধ্যে প্রবেশ করে করতোয়া নাম ধারণ করেছে। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে এই নদীর কূল উপচে বাইরের অংশে আঘাত করে। এতে নদী তীর ভেঙে আশপাশের এলাকার জনগণের বাড়িঘর, আবাদি জমি, সরকারি অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে অনেক ছোট নদী, খাল ও জলাশয় রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় এগুলো ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করে। অন্যদিকে সেচ সুবিধা পাওয়া যায় না। মৎস্য চাষও বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতা নিরসন, সেচ সুবিধা, মৎস্য চাষ ও নদীভাঙন থেকে রক্ষায় পীরগঞ্জে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা প্রয়োজন বলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় মনে করছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, মন্ত্রণালয়ের এসব প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই করতে ২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি যাচাই-বাছাই করে কিছু সুপারিশ করে। সেসব সুপারিশের ভিত্তিতেই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় ১০ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ করা হবে। এছাড়া ৪২ দশমিক ২৬ কিলোমিটার নদী বা খাল পুনঃখনন এবং দু’টি কম্বাইন্ড রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। পাশাপাশি সেচ সুবিধার উন্নয়ন হবে, মৎস্য চাষের সুযোগ বাড়বে এবং নদীভাঙন থেকে ১৫০০ হেক্টর উর্বর কৃষি জমি, মৎস্য খামার, বনায়ন ও সাধারণ জনগণের জানমাল রক্ষা করা সম্ভব হবে। এসব কারণে প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে, পরিকল্পনা কমিশনের একটি সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্প তৈরির আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি। তবে একটি কারিগরি কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্রকল্পটি ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তবে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীর সম্মতি নেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর