করোনায় ১৩ মাসের সংক্রমণ ছাড়িয়ে গেল শেষ ৪ মাস
২৯ জুলাই ২০২১ ১০:০৩
ঢাকা: দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর চলতি বছরের ২৮ জুলাই পর্যন্ত পেরিয়ে গেছে আরও ৫০৮ দিন। এই সময়ে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১২ লাখ ১০ হাজার ৯৮২ জনের মাঝে। এর মাঝে সর্বশেষ ১২০ দিন অর্থাৎ চার মাসে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ছয় লাখ পাঁচ ৪৫ জনের মাঝে। এর আগে ৩৮৮ দিনে অর্থাৎ প্রায় ১৩ মাসে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ছয় লাখ পাঁচ হাজার ৯৩৭ জনের মাঝে।
বুধবার (২৮ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৩ হাজার ৮৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ হাজার ২৩০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এটি দেশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত দেশে ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৫৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১২ লাখ ১০ হাজার ৯৮২ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
শেষ ১২০ দিনেই দেশে ৬ লাখের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত
দেশে চলতি বছরের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো মাসে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে মে মাসে দেশে ৪১ হাজার ৪০৮ জনের মাঝে সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
জুন মাসে দেশে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তবে জুলাই মাসের প্রথম ২৮ দিনেই সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৭২৪ জনের মাঝে।
এর আগে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা এক লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ জনের মাঝে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। কিন্তু জুলাইয়ের প্রথম ২৮ দিনে তার দ্বিগুণ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত।
৩১ মার্চ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত দেশে ১২০ দিন সময়সীমায় ৬ লাখ ৫ হাজার ৪৫ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু তার আগে প্রায় ১৩ মাস সময়ে এ পরিমাণ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত দেশে ৬ লাখ পাঁচ হাজার ৯৩৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
মাস ভিত্তিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য
২০২০ সালের ২১ জানুয়ারিতে দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের লক্ষ্যে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। এরপর ৮ মার্চ প্রথম জানা যায়, দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির উপস্থিতি রয়েছে। ওই দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, ইতালি ফেরত দুজন এবং তাদের একজনের পরিবারের আরেক সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।
২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে সর্বমোট এক হাজার ৩১০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে ৫ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ৩.৮৯ শতাংশ।
২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দেশে সর্বমোট ৬২ হাজার ৮২৬টি নমুনা পরীক্ষা করে সাত হাজার ৬১৬ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে ১৬৩ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ১২.১২ শতাংশ।
২০২০ সালের মে মাসে দেশে সর্বমোট দুই লাখ ৪৪ হাজার ২৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৮২ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে ৪৮২ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ১৬.১৭ শতাংশ।
২০২০ সালের জুন মাসে দেশে সর্বমোট চার লাখ ৬০ হাজার ৫৩০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯৮ হাজার ৩৩০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে এক হাজার ১৯৭ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ২১.৩৫ শতাংশ। মূলত এই মাসেই দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের আগ পর্যন্ত।
২০২০ সালের জুলাই মাসে দেশে সর্বমোট চার লাখ ৭ হাজার ৩৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯২ হাজার ১৭৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে এক হাজার ২৬৪ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ২২.৬৩ শতাংশ।
২০২০ সালের আগস্ট মাসে দেশে সর্বমোট তিন লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭৫ হাজার ৩৩৫ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে এক হাজার ১৭০ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ২০.১৮ শতাংশ।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সর্বমোট তিন লাখ ৯৭ হাজার ৫৪৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫০ হাজার ৪৮৩ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে ৯৭০ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ১২.৭০ শতাংশ।২০২০ সালের অক্টোবর মাসে দেশে সর্বমোট তিন লাখ ৮৮ হাজার ৬০৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৪ হাজার ২০৫ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে ৬৭২জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ১১.৩৮ শতাংশ।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসে দেশে সর্বমোট চার লাখ ৩৬ হাজার ৪৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৭ হাজার ২৪৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে ৭২১ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ১৩.১২ শতাংশ।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশে সর্বমোট চার লাখ ৫৪ হাজার ৮৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৮ হাজার ৫৭৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে ৯১৫ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ১০.৬৮ শতাংশ।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে সর্বমোট চার লাখ ২৪ হাজার ১২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ২১ হাজার ৬২৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে ৫৬৮ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ৫.১০ শতাংশ।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে সর্বমোট তিন লাখ ৯২ হাজার ৩০৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ১১ হাজার ৭৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে ২৮১ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ২.৮২ শতাংশ। বাংলাদেশে মাসিক হিসেবে এই মাসে সব চাইতে কম সংখ্যক সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত।
২০২১ সালের মার্চ মাসে দেশে সর্বমোট ছয় লাখ ২৬ হাজার ৫৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬৫ হাজার ৭৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে ৬৩৮ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ছিল ১০.৩৯ শতাংশ।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে দেশে সর্বমোট সাত লাখ ৯৯ হাজার ১২৮টি নমুনা পরীক্ষা করে এক লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ১৮.৫০ শতাংশ।
২০২১ সালের মে মাসে দেশে সর্বমোট চার ৭৭ হাজার ৮০৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪১ হাজার ৪০৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ৮.৬৭ শতাংশ।
২০২১ সালের জুন মাসে দেশে সর্বমোট ছয় লাখ ৬১ হাজার ৪১৪টি নমুনা পরীক্ষা করে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার ১৭.০৪ শতাংশ।
২০২১ সালের জুলাই মাসের প্রথম ২৮ দিনে দেশে সর্বমোট ১০ লাখ ৩ হাজার ৬৬১টি নমুনা পরীক্ষা করে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৭২৪ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এ মাসে সংক্রমণের হার এখন পর্যন্ত ২৯.৬৬ শতাংশ।
এ পরিস্থিতিতে করণীয়
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে করণীয় কী— জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় সম্প্রতি ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। তবে একই সময়ে কিন্তু সংক্রমণও অনেক বেড়েছে।
তিনি বলেন, সংক্রমণ বাড়লেই বয়স্ক মানুষদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা ]বাড়বে। যারা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। আর বয়স্ক এবং এ ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। তাই সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ডা. আলমগীর আরও বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে সবচেয়ে জরুরি হলো ব্যক্তির সচেতনতা। সরকার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করবে কিন্তু ব্যক্তি যদি সচেতন হয়ে সরকারি পদক্ষেপে সহযোগিতা না করে; তবে বিপদ বাড়বে।
কারণ, কোনো এলাকায় একজন সংক্রমিত হলেই তার পরিবার-সমাজে সংক্রমণ ছড়াবে। এ কারণেই সকলকে মাস্ক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সচেতন থাকার পাশাপাশি, মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে এবং নমুনা পরীক্ষা করে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন আইইডিসিআরের এই কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/এসবি/এসএসএ