যুবককে পিটিয়ে হত্যার ৫ দিনেও মামলা হয়নি
৩০ জুলাই ২০২১ ০৯:৩৩
সিরাজগঞ্জ: জেলার শাহজাদপুরে সোহেল রানা (৩৭) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা দায়ের করতে পারেনি পরিবার।
এমনকি, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত পৌর কাউন্সিলর নাজমুল হাসান এবং তার ভাই পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম শাহুসহ জড়িতরা গা-ঢাকা দিয়েছে। তারা শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
এদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোরালো দাবি জানালেও আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশের নেতারা সরাসরি এ হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে খবর মিলেছে।
অন্যদিকে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে যার নাম বারবার আসছে সেই পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শাহু এবং তার ভাই পৌর কাউন্সিলর নাজমুল হাসান তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপনে থেকে আওয়ামী লীগের ওই প্রভাবশালী চক্রটির সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং তাদেরকেই দিয়েই প্রভাব বিস্তার করিয়ে মৃতের পরিবারকে মামলা দায়ের করতে দিচ্ছেন না।
অপরদিকে, মৃত সোহেল রানার পরিবারকে গৃহবন্দি করে ফেলেছে প্রভাবশালীরা। পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি করলেও কেউ বাদি হয়ে মামলা না করায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারছে না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শাহজাদপুর পৌরসভা নির্বাচনে চার নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নেন মৃত সোহেল রানার ফুফাতো ভাই নাজমুল হাসান। কিন্তু নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ না নেওয়ায় সোহেল রানার উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন কাউন্সিলর নাজমুল। এ নিয়ে পারিবারিকভাবেও একাধিকবার দরবার হয়েছিল। বিষয়টি সে সময়ের জন্য পারিবারিকভাবে নিষ্পত্তি হলেও নিজের ভেতরে নির্বাচনি বিরোধিতার ক্ষোভ পুষিয়ে রেখেছিলেন নাজমুল হাসান। সেই ক্ষোভের বলি হলেন মৃত আসাব আলীর ছেলে সোহেল রানা (২৭)।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, গত রোববার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে সোহেল রানা বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের একটি দোকানে বসেন। ওই সময়ে সোহেল রানা কাউন্সিলর নাজমুল হাসান ও তার ভাই শাহজাদপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম শাহুকে উদ্দেশ্য করে গালমন্দ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন এবং নির্বাচনকালীন সময়ের পুষে রাখা ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে সোহেল রানার উপর অতর্কিত হামলা চালান কাউন্সিলর নাজমুল হাসান।
এ সময়ে তার সহযোগী হৃদয় ও রানাও তাকে বেদম মারধর করেন। এতে সোহেল রানা গুরুতর আহত হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন।
সোমবার (২৬ জুলাই) দুপুরে সোহেল রানা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয় পিপিডি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সোহেল রানার মা মোছা. রোমি বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘শাহজাদপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল হাসান, হৃদয় খান ও রানা আমার ব্যাটাকে মাইরা ফালাইছে। আমার ব্যাটা কী এমন কইছিল যার লাইগ্যা মাইরা ফালান লাগবে। আমি গরিব মানুষ কার কাছে বিচার চামু।’
রানার ভাতিজা শামিম অভিযোগ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ বিচার আমরা পাব না। কে বিচার করবে এ দেশ তাদের? যার গেছে সেই বোঝে। আমরা বিচারও পামু না তাই কাহুর কাছে বিচারও চাই না।’
সোহেল রানার মায়ের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, সেই কাউন্সিলর নাজমুল হাসানের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে বার বার কল করলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম শাহু বলেন, রানা মাদকাসক্ত হওয়ায় আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। সোমবার দুপুরে তার অবস্থার আরও অবনতি হয় ও স্ট্রোক করে মারা যায়। মারধরের কারণে নয়, স্ট্রোকেই রানার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদ মাহমুদ খান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওসি আরও বলেন, মৃতের হাঁটু এবং হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কী কারণে এ মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের পরে জানা যাবে। তবে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের না করায় জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। পুলিশ এ ব্যাপারে আন্তরিক ও তৎপর রয়েছে।
সারাবাংলা/একেএম