সরকারবিরোধী পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন হেলেনা
৩১ জুলাই ২০২১ ০৮:২৭
ঢাকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগের উপকমিটি থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া ‘বিতর্কিত’ নেতা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এই মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী ও বিশেষ মহলের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইতেন তিনি। সরকারবিরোধী পরিকল্পনায় তিনি জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) রাতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে উপস্থাপন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ শাহানুর রহমান। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন তিনি।
এই মামলার এজাহারে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, ভার্চুয়াল তথা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম করে তিনি মিথ্যা তথ্য প্রচার করতেন। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে মানহানি তথ্যও নিয়মিত প্রকাশ করতেন। এছাড়া সরকারি সংস্থাগুলোকে নিয়ে কটূক্তি করতেন তিনি। এর মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটনো বা বিশৃঙ্খলা ছড়াতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। হেলেনা জাহাঙ্গীর গোপনে সরকারবিরোধী কার্যকলাপ ও পরিকল্পনায় লিপ্ত বলেও অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তার সঙ্গে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও বিশেষ মহলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তিনি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চান।
আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের পর এসব অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে প্রাথমিকভাবে জানতে চাওয়া হলেও তিনি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেননি। কিন্তু মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াও হেলেনা জাহাঙ্গীর যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন করা প্রয়োজন। এ কারণে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার পাঁচ দিনের রিমান্ড চান তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবুসহ কয়েকজন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আসামি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন। আসামি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একটি চক্র সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। হেলেনা জাহাঙ্গীরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন সমর্থন করেন তিনি।
তবে আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। মামলায় হেলেনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। বলেন, ‘কাউকে নিয়ে অপমানজনক, মানহানিকর কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়— এমন বক্তব্য হেলেনা জাহাঙ্গীর দেননি। আসামি অপরাধ করলে তার বিচার হবে। রিমান্ডের যৌক্তিকতা নেই।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের পক্ষে এই আইনজীবী বলেন, ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে। হেলেনা জাহাঙ্গীর একজন সিআইপি। অযথা কেন নিজেই নিজের হয়রানির কারণ হবেন, সুনাম নষ্ট করবেন? সরকারের ক্ষতি হবে— তার এমন কোনো বক্তব্য নেই। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন প্রার্থনা করছি।
সব পক্ষের বক্তব্য শেষে আদালত হেলেনা জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন হেলেনা জাহাঙ্গীরকে হাজির করার আগে আদালতপাড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য নিয়োজিত করা হয়।
সারাবাংলা/এআই/টিআর