Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্লাবিত সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল, ক্ষতিগ্রস্ত ২০ হাজার মাছের ঘের

কামরুল হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩১ জুলাই ২০২১ ০৯:৩৯

সাতক্ষীরা: তিনদিনের ভারীবর্ষণে ভেসে গেছে সাতক্ষীরার রোপা আমন, বীজতলা, পুকুর ও মাছের ঘের। পানিতে তলিয়ে গেছে ৭৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার নিম্নাঞ্চল। মৎসচাষীদের দাবি, অতিবৃষ্টিতে শুধুমাত্র মাছের ক্ষতি হয়েছে ৫৩ কোটি টাকার মতো।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা আলীনুর খান বাবুল বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে আমাদের এলাকা তলিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার যে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে তাদের চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। পানি বের হওয়ার সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির নেতা আনিসুর রহিম বলেন, পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে পৌরসভার ইটাগাছা, কামাননগর, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙি ও কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিস্তৃীর্ণ এলাকা।

এদিকে সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বিলগুলোতে সদ্য রোপন করা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও তেমন পানি টানতে পারছে না।

জানা গেছে, অতিবৃষ্টির ফলে গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, কচুয়ার বিল, চেলারবিল, পালিচাঁদ বিল, বুড়ামারা বিল, হাজিখালি বিল, আমোদখালি বিল, বল্লীর বিল, মাছখোলার বিলসহ কমপক্ষে ২০টি বিল ডুবে গেছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলোর পানি নদীতে নিষ্কাষিত হতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার ভেতরে ঢুকছে।

বিজ্ঞাপন

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৪৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ৫ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, ভারীবর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। ৮৬০ হেক্টর রোপা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ৫০০ হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি আর না হলে ক্ষতির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমবে বলে জানান কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম।

জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আমপানে সাতক্ষীরায় মাছের ক্ষতি হয় ১৭৬ কোটি টাকা। ইয়াসের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে মাছের ক্ষতি হয় ১৬ কোটি টাকা। সবশেষ বৃহস্পতিবার ব্যাপক বর্ষণে ৫৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে আশাশুনির শ্রীউলা এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আলাউল ইসলাম জানান, বছরে তিন থেকে চারবার আমাদের মাছের ঘের ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেই। ৫০ বিঘার একটি ঘেরে আমপানে আমার ক্ষতি হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। ইয়াসে ক্ষতি ছিল ৫ লাখ টাকা। আর এবার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। ঘের ব্যবসা আগামীতে বাদ দেবেন বলে জানান আলাউল ইসলাম।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, জেলার আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার ১৯ হাজার ৪৫৯টি মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘেরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫ হেক্টর। মাছের ক্ষতির পরিমাণ ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ঘরবাড়িসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে।

সারাবাংলা/এএম

বন্যা ভারীবর্ষণ মাছের ঘের সাতক্ষীরা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর