Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গণপরিবহন বন্ধ রেখে কারখানা খুলে শ্রমিকদের দুর্ভোগে ফেলা হয়েছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ জুলাই ২০২১ ১৮:৪৩

ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) উচ্চ সংক্রমণের সময়ে গণপরিবহন বন্ধ রেখে কারখানা খুলে দেওয়ার সরকারি ঘোষণায় শ্রমিকদের দুর্ভোগে ফেলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। ফলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তায় বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

শনিবার (৩১ জুলাই) শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন। গণপরিবহন বন্ধ রেখে ১ লা আগস্ট থেকে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা চালু করার সিদ্ধান্তে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও হয়রানির ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের দায়িত্বহীনভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত ঘোষণার নিন্দা জানান নেতারা।

বিজ্ঞাপন

ওই বিবৃতিতে নেতারা বলেন, যখন করোনা সংক্রমণের হার এবং করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় প্রতিদিন নতুন রেকর্ড করছে। হাসপাতালে জায়গার অভাবে মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। আর স্বাস্থ্য অধিদফতর চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তখন শিল্প-কারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।

নেতারা আরও বলেন, দুইদিন আগেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সঙ্গে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেন— ৫ আগস্ট পর্যন্ত জরুরি তিন ধরনের সেবা ব্যতীত কোনো শিল্প-কারখানা খোলা যাবে না। ঈদের এক সপ্তাহ পুর্বে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধকালে তৈরি পোশাকসহ সকল শিল্প-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ঈদের একদিন পর ২৩ জুলাই থেকে সকল গণপরিবহন পরিবহন বন্ধ।

বিজ্ঞাপন

এমন পরিস্থিতিতে ১ আগস্ট থেকে পুনরায় রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা খোলার নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৩০ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। শ্রমিককে কর্মস্থলে ফেরার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা না করে এবং পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে কারখানা খোলার এই অনুমোদন শ্রমিকদের দ্বিমুখী সংকটের মধ্যে ফেলেছে বলেও ওই বিবৃতি বলা হয়।

নেতরা আরও বলেন, একদিনের মধ্যে কর্মস্থলে না ফিরলে চাকরিচ্যুতি, বেতন কর্তন। অন্যদিকে গণপরিবহন বন্ধ অবস্থায় লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মস্থলে ফিরতে বহুগুণ বেশি অর্থ ব্যয়, করোনা সংক্রমণ আর স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হবে। শ্রমিকদের স্বার্থ আর সুরক্ষার বিবেচনা না করে সরকারের একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের দুর্ভোগ আর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। করোনার সুযোগ নিয়ে শ্রমিকদের অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে। শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনের চাকা সচল রাখলেও তার কোনো স্বীকৃতি নেই। পর্যাপ্ত খাদ্য, বিশ্রামে সুযোগ দিয়ে শ্রমিকদের রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়ানোর পরিবর্তে চাকরি হারানোর হুমকি দিয়ে শ্রমিকদের ওপর কাজের অধিক চাপ তৈরি, মজুরি কর্তন, নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধি করে তাদের আরও বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। তাই কারখানা চালুর পুর্বে শ্রমিকদের জন্য পরিবহন, ঝুঁকি ভাতা, মহার্ঘ ভাতা ও ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করার আহবান জানান নেতারা।  তাই ঝুঁকি নিয়ে কারখানা চালুর পূর্বশর্ত হিসাবে বেশকিছু দাবি জানান শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা।

দাবিগুলো হলো— শ্রমিকদের সহজে করোনা পরীক্ষা, সংক্রমিতদের আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা, চিকিৎসা চলাকালে খরচের দায়িত্ব নেওয়া, করোনায় মৃত্যুতে সরকারি কর্মচারীদের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ। এছাড়াও কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বেশি অর্থ ব্যয় করে চাকরি রক্ষার স্বার্থে যে শ্রমিকরা ঢাকায় আসছে— তাদের যাতায়াত খরচ প্রদান, করোনাকালে ঝুঁকিভাতা প্রদান, শ্রমিকদের দ্রুততম সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদান, প্রয়োজনীয় মাস্ক-স্যনিটাইজার সরবরাহ করা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস

করোনাভাইরাস কারখানা খুলে গণপরিবহন বন্ধ শ্রমিকদের দুর্ভোগে ফেলা হয়েছে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর